সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের উড়ান ব্যবসায় ইন্ডিগোর 'একাধিপত্য'ই কি এই বিপর্যয় ডেকে আনল? গত প্রায় আট দিন ধরে যাত্রী পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়তেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার এনডিএ-র সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে কড়া বার্তা দিয়েছেন, তাতেও প্রশ্ন উঠছে গোটা ব্যবস্থা নিয়ে।
দেশের ঘরোয়া বিমান পরিষেবার বাজারের প্রায় ৬৫ শতাংশ বর্তমানে ইন্ডিগোর দখলে। আর ২৬.৫ শতাংশ দখল করে রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। অর্থাৎ, বাজারের ৯০ শতাংশের বেশিই এই দুই সংস্থার দখলে। সেই অর্থে উড়ান ব্যবসায় 'ডুয়োপলি' চলে দেশে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এই ব্যবস্থা নিয়েই আপত্তি তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মত, সাধারণত উড়ান পরিষেবায় একচেটিয়া ব্যবসায় সুফল পাওয়া যায়। ইন্ডিগোর ক্ষেত্রেই যেমন এতকাল ছিল। দেশে সবমিলিয়ে ১২০০ ঘরোয়া রুটের মধ্যে অন্তত ৬০০ রুটে ইন্ডিগোর বিমান চলে। যার সুবিধা পান বহু যাত্রীই। শুধু ঘরোয়া পরিষেবাতেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিষেবাতেও ইন্ডিগোর বিমান যাত্রীদের প্রথম পছন্দ। কিন্তু এই ব্যবস্থাতেই অশনিসংকেত থাকে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের যুক্তি, যদি সেই সংস্থায় কোনও বিপর্যয় ঘটে, তা হলে তার প্রভাব গোটা উড়ান পরিষেবাতেই পড়বে। ইন্ডিগো বিপর্যয়েও ঠিক তা-ই ঘটেছে।
অনেকের মত, শুধু উড়ান বাতিল হওয়াকে কেন্দ্র করে বিপর্যয় নয়, 'মনোপলি' (একচেটিয়া ব্যবস্থা) বা 'ডুয়োপলি' ব্যবস্থায় আরও নানা কারণেই সমস্যায় পড়তে পারেন যাত্রীরা। তার মধ্যে অন্যতম হল খরচ। আর কোনও বিকল্প নেই জেনেই ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে দিতে পারে বিমান সংস্থা। বিমানের পরিকাঠামোগত উন্নয়নেও অনীহা দেখা দিতে পারে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে যাত্রী পরিষেবাতেই। এ ছাড়া একচেটিয়া ব্যবস্থা গড়ে উঠলে অন্য বিমান সংস্থাও বাজারে প্রবেশ করবে না।
ঘটনাচক্রে, ভারতের উড়ান পরিষেবার বাজারের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। নতুন কোনও সংস্থাই বাজারে ছাপ ফেলতে পারেনি। গত ২০ বছরে বেশ কিছু সংস্থা ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল জেট এয়ারওয়েজ, গো ফার্স্ট, কিংফিশার, এয়ার ডেকান। এই সংস্থাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই ইন্ডিগোর ব্যবসা উত্তরোত্তর বেড়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে অনেকের অভিযোগ, এখানেই সরকারি নজরদারির প্রয়োজন ছিল। অশনিসংকেত রয়েছে জেনেও সরকারি কিছু করেনি। এর জন্য কেন্দ্রকেও অনেকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। যদিও সরকারি আধিকারিকদের একাংশের মত, 'মনোপলি' (একচেটিয়া ব্যবস্থা) বা 'ডুয়োপলি' ব্যবস্থা সমস্যাজনক নয়। সমস্যাজনক হল 'মনোপলি' (একচেটিয়া ব্যবস্থা) বা 'ডুয়োপলি' ব্যবস্থার অপব্যবহার।
এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলেও, ইন্ডিগোর উড়ান বাতিলের জেরে যাত্রী হয়রানি পুরোপুরি শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নায়ডু। রাজ্যসভায় তিনি বলেছেন, "ওই সংস্থার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যা অন্যদের সামনেও উদাহরণ হয়ে থাকবে।" বিমান মন্ত্রকের সচিব সমীরকুমার সিন্হা জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি নায়ডু জানিয়েছেন, বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে আরও বিমান সংস্থার যোগদান চায় কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতে পাঁচটি বড় বিমান সংস্থার কাজের সুযোগ রয়েছে বলেই দাবি করেছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় সংসদবিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, এনডিএ-র সাংসদদের বৈঠক মোদি বার্তা দিয়েছেন, "মানুষের যাতে দুর্ভোগ না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নিয়মবিধি যা রয়েছে, তা সবই ভালো। কিন্তু এই সব নিয়মবিধি বানানো হয় গোটা ব্যবস্থাকে আরও ভালো করার জন্য। মানুষকে হেনস্তা করতে নয়।" কিরেনের সংযোজন, "প্রধানমন্ত্রী খুব স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এমন কোনও নিয়মকানুন থাকা উচিত নয়, যার কারণে মানুষের সমস্যা হতে পারে। আইন মানুষের সুবিধার জন্য, বোঝা হওয়ার জন্য নয়।" প্রশ্ন উঠছে, এই বার্তার মধ্যে দিয়ে কি নিজের প্রশাসনেরই সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী? অনেকের মত, এখন যাবতীয় নিয়মকানুন বানানোর দায়িত্ব তো মোদিরই প্রশাসনের উপর। ফলে দায়ও তাঁর সরকারেরই। আদতে মোদি প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিলেন, আইনকানুনে কোনও ভুল নেই। ভুল সেই সব আইনকানুনের প্রয়োগে হয়েছে।
