shono
Advertisement
Kalpana Chawla

তারকা হয়ে ফিরলেন সুনীতা, মহাকাশে তারা হয়ে রয়ে গেল 'ঘরের মেয়ে', কল্পনার বেদনা কার্নালে

মহাশূন্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল কল্পনার ঘরে ফেরার অভিযান।
Published By: Suchinta Pal ChowdhuryPosted: 08:34 AM Mar 20, 2025Updated: 10:03 AM Mar 20, 2025

অরূপ কর: সুনীতা উইলিয়ামসের মহাকাশ অভিযানের সাফল্যে চতুর্দিকে সেলিব্রেশন, উচ্ছ্বাসের মধ্যেই ভারতের বেশি করে মনে পড়ছে আরেক মেয়ের কথা। তিনি ভারত-কন্যা কল্পনা চাওলা। সুনীতা টানা ৯ মাসের উপর আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে আটকে থেকে অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ, উত্কণ্ঠার প্রহর গুনলেও শেষ পর্যন্ত স্বস্তি পেয়েছেন মর্তে ফিরে এসে। কিন্তু মহাশূন্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল কল্পনার ঘরে ফেরার অভিযান। দিনটা ছিল ২০০৩ সালের ‌১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। আচমকা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকতেই কল্পনা ও আরও ৬ নভোশ্চরকে নিয়ে ফেরা মহাকাশযান কলম্বিয়া টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ে। যান্ত্রিক গলদের জেরে তাতে আগুন লেগে গিয়েছিল। অবতরণের পূর্বনির্ধারিত সময়ের ‌১৬ মিনিট আগেই তাঁদের সাফল্যের স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। শেষ হয় এক সাহসী, দুরন্ত মেয়ের জীবনের উড়ান।

Advertisement

সুনীতারা ঘরে ফিরলেন সেই কল্পনার জন্মদিনের দুদিন পর। কল্পনার জন্ম ১৯৬২-র ‌১৭ মার্চ। হরিয়ানার কার্নালে। জীবিত থাকলে কল্পনার বয়স দাঁড়াত ৬৩। আজ সুনীতার সাফল্যে যেমন গুজরাটের মেহসানায় বাজি ফাটছে, আবির উড়ছে, নাচে-গানে উদ্বেল স্থানীয় লোকজন, সেদিন কার্নালবাসীও তৈরি ছিলেন ঘরের মেয়ের সাফল্যের গর্বে উৎসবে মেতে ওঠার জন্য। কিন্তু প্রদীপ জ্বালানোর অবকাশ আর রইল না। কল্পনার জীবনদীপ নিভে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার নেমে এল কার্নালে। আজও সেদিনটা ভোলেনি কার্নাল। সুনীতার মধ্যেই হয়তো কল্পনাকে খুঁজে পেয়েছে সে। কল্পনাকে স্মৃতিতে সজীব রেখেই সুনীতাকে ধন্য ধন্য করছে কার্নালবাসী। ঘটনাচক্রে মহাকাশকে জানার অদম্য কৌতূহল, অপার বিস্ময় সুনীতা, কল্পনাকে মিলিয়ে দিয়েছিল এক বিন্দুতে। দু'জনে ছিলেন পরস্পরের ভালো বন্ধু। সুনীতাই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তা। দু'জনের অনেক পছন্দই ছিল এক। সামোসা-প্রীতি তার অন্যতম।

সুনীতা বলেছেন, "অনেক মিল ছিল আমাদের। প্রথমটা হল, দু'জনেরই পছন্দ ভারতীয় খানা।" কল্পনার সেই দুর্ঘটনার স্মৃতি টাটকা সুনীতার মনে। তিনি বলেছেন, "আমার প্রথম মহাকাশ অভিযানের প্রায় তিন মাস বাদে কলম্বিয়ার বিপর্যয় ঘটেছিল। এক ভালো বন্ধু হারানোর যন্ত্রণা পেয়েছি। কোনওদিন আবার একসঙ্গে ওড়া হবে না। কিন্তু একইসঙ্গে ভেবেছি, এগিয়ে যেতে হবে অভিযানে। তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমার যা যা করা প্রয়োজন, সেটাই করব।" ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন কল্পনা। ডাকনাম ছিল মন্টো। বাবা বানারসী লাল চাওলা দেশভাগের রক্তাক্ত পর্ব দেখেছেন। ভুক্তভোগী বানারসীকে ভাঙা জীবন নতুন করে গড়তে হয়েছে। বাবার লড়াকু চেতনা রক্তে নিয়েই বড় হয়েছেন কল্পনা। তাই যে কালে নভোশ্চর হওয়ার বাসনা কোনও মেয়ের হতই না, সে সময় কল্পনার মহাশূ্‌ন্যে সফরের স্বপ্ন দেখার সাহস হয়েছিল।

কল্পনার স্কুল জীবনের শিক্ষক দলজিৎ কৌরের কথায়, বিয়ে করে সুখে সংসার করার ইচ্ছে হয়নি ওর। খানিকটা বিদ্রোহী মানসিকতা ছিল। স্বপ্ন দেখার সাহস শেষ পর্যন্ত সফল হতে শুরু করে। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি পাড়ি দেন আমেরিকা। সেখানে এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স, পিএইচ-ডি। এরপর তাঁর সামনে নাসার দরজা খুলতে দেরি হয়নি। ১৯৮৮ এই নাসার অ্যামে রিসার্চ সেন্টারে যোগদান। ১৯৯৪ এর ডিসেম্বর নাসা তাঁকে সম্ভাব্য মহাকাশচারী বাছাই করে।

১৯৯৭-এ কল্পনার প্রথম মহাকাশ সফর। মহাকাশযান কলম্বিয়ার এসটিএস-৮৭ মিশনে তিনি স্পেশালিস্ট ও রোবোটিক আর্ম অপারেটরের ভূমিকায়। তাতে সাফল্য এল। অবশ্য শেষ পর্যন্ত মহাকাশ জীবন চূড়ান্ত সাফল্য পেল না। কিন্তু কল্পনাই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়েদের মহাকাশ অভিযানের আলো জ্বালালেন। তাঁরই পথ ধরে এগিয়ে এলেন সুনীতা। আগামীদিনে অবশ্যই আরও অনেকে আসবেন। তাঁদের মধ্যেই কল্পনা বেঁচে থাকবেন আলোকবর্তিকা হয়ে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সুনীতা উইলিয়ামসের মহাকাশ অভিযানের সাফল্যে চতুর্দিকে সেলিব্রেশন, উচ্ছ্বাসের মধ্যেই ভারতের বেশি করে মনে পড়ছে আরেক মেয়ের কথা।
  • তিনি ভারত-কন্যা কল্পনা চাওলা। কিন্তু মহাশূন্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল কল্পনার ঘরে ফেরার অভিযান। দিনটা ছিল ২০০৩ সালের ‌১ ফেব্রুয়ারি।
  • আচমকা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকতেই কল্পনা ও আরও ৬ নভোশ্চরকে নিয়ে ফেরা মহাকাশযান কলম্বিয়া টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ে।
Advertisement