সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে আমেরিকা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার ক্ষমতায় আসার পর চিনা পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ট্রাম্পের রোষানল থেকে রেহাই পায়নি ভারতও। অস্ত্রবিহীন এই শুল্কযুদ্ধে আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে এবার ভারতকে পাশে চাইল ড্রাগন দেশ! শুক্রবার নয়াদিল্লিকে এই ইস্যুতে বার্তা দিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি বলেন, "আধিপত্যবাদ ও পেশিশক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে ভারত ও চিন উভয় দেশকে একত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে। ফলে হাতি (ভারত) ও ড্রাগনের (চিন) নাচকে বাস্তবে পরিণত করাই একমাত্র সঠিক পথ।" শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢালাও প্রশংসাও করলেন চিনা বিদেশমন্ত্রী।
ভারত ও চিনের মধ্যে শত্রুতার সূত্রপাত সেই ষাটের দশকে। এর পর বহুবার দুই দেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা হলেও অতীতের দাগ পুরোপুরি মোছা সম্ভব হয়নি। লাদাখ ও অরুণাচলে এমনকী ভারত মহাসাগরে চিনা আগ্রাসন দুই দেশকে ক্রমশ দূরে ঠেলেছে। সম্পর্কের সেই টানাপড়েন বাড়তি মাত্রা পেয়েছে ভারত বিরোধিতায় চিনের পাক ঘনিষ্ঠতা। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার অধীশ্বর হওয়ায় এশিয়ার এই চিরাচরিত কূটনৈতিক অঙ্ক চিনকে নতুন করে কষতে হচ্ছে। ট্রাম্পের আমেরিকা যেভাবে চিনের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে তাতে জিনপিং প্রশাসন বেশ বুঝতে পারছে এশিয়ার দুই শক্তিশালী দেশের এক হওয়ার গুরুত্ব কতখানি। এই পরিস্থিতিতেই শুক্রবার দিল্লি ও বেজিংয়ের নয়া সমীকরণের অঙ্ক কষলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই।
শুক্রবার বেজিংয়ে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের বৈঠকের পর ওয়াং বলেন, "হাতি ও ড্রাগনের নাচকে বাস্তবে পরিণত করাই একমাত্র সঠিক পথ।" একইসঙ্গে বলেন, "পরস্পরকে সমর্থন করা, একে অপরকে দুর্বল না করা এবং একে অপরকে সহযোগিতা করাই দুই দেশের মৌলিক স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ও চিন এশিয়ার দুই মহান শক্তি এক হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিক থেকে 'গ্লোবাল সাউথ'-এর ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল।" অতীতের জটিলতা কাটিয়ে দুই দেশ যে ইতিবাচক অগ্রগতির লক্ষ্যে কাজ করছে সে বার্তা দিয়ে চিনা বিদেশমন্ত্রী বলেন, 'গত বছর এই সমস্যা মেটাতে ইতিবাচক আলোচনা করেছে দুই দেশ। সমস্যা মেটাতে রাশিয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন শি জিনপিং। দুই দেশ নিজেদের তরফ থেকে যৌথ পদক্ষেপ নিয়েছে। সীমান্ত ইস্যুতে দুই দেশের সংঘাত আগের চেয়ে অনেকটা কেটেছে। যা দুই দেশের জন্যই সদর্থক।'
তবে আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চিনের তরফে ভারতকে পাশে পাওয়ার এই আর্জি প্রসঙ্গে কূটনৈতিক মহলের দাবি, আসলে চিন বুঝতে পারছে এই মুহূর্তে আমেরিকার প্রধান শত্রুর তালিকায় উঠে এসেছে চিন। শুধু তাই নয়, চিনের পরম মিত্র রাশিয়াকেও ইউক্রেন ইস্যুতে নিজেদের পাশে টেনে নিচ্ছেন ট্রাম্প। যাতে রাশিয়ার চিন নির্ভরতা কমানো যায়। এবং ভারতের শত্রু তালিকায় থাকা চিন একা হয়ে যায় বিশ্ব রাজনীতিতে। চিনের উপর অধিক শুল্ক আরোপ তো বটেই অন্যান্য ক্ষেত্রেও ড্রাগনকে কোণঠাসা করতে উঠে পড়ে লেগেছে আমেরিকা। এই জটিল অবস্থার মাঝে 'এশিয়ার হাতি' হিসেবে পরিচিত ভারতকে নিজেদের পাশে চাইল 'শত্রু' চিন। তবে আমেরিকার সুসম্পর্কের মাঝে ভারত এই আবেদনে সাড়া দেবে কিনা তা অবশ্য সময় বলবে।
