‘হাসি-কান্না হিরা-পান্না’য় শেষ হচ্ছে আরও একটা বছর। বিগত হতে চলা ২০২৪ সালে শিরোনামে কখনও উঠে এসেছে বেদনাদায়ক ঘটনা কখনও বা সুখস্মৃতি। যেমন বছরভর চর্চায় থেকে গেলেন গৌতম আদানি থেকে শুরু করে আল্লু অর্জুন। বছর শেষে সেসব দিনই ফিরে দেখল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
গৌতম আদানি: ২০২৩ সালে জাতীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে চর্চিত নাম ছিলেন শিল্পপতি গৌতম আদানি। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর তাঁর সংস্থার শেয়ারে ধস এবং জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে চলে আসা। এই দুইয়ে মিলিয়ে বছরভর শিরোনামে ছিলেন তিনি। সেই একই ধারা বজায় রইল ২০২৪ সালে। এবছর লোকসভা নির্বাচনে অন্যতম বড় ইস্যুই ছিলেন আদানি। ভোটের আগে থেকে শুরু করে বছরভর মোদি-আদানির বন্ধুত্ব নিয়ে অভিযোগ করে গিয়েছেন বিরোধীরা। পালটা খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেসকে বিঁধেছেন আদানি অস্ত্রেই। মোদির পালটা অভিযোগ ছিল, টেম্পোতে করে আদানির টাকা গিয়েছে কংগ্রেসের ঘরেও। মোদির সেই মন্তব্যে আরও একদফা শাসক-বিরোধী সংঘাত। ভোট মেটার পরও আদানির পিছু ছাড়েনি রাজনীতি। বছর শেষে আমেরিকার আদালত আদানিদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত পাওয়ার জন্য বিরাট অঙ্কের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। যা বিরোধীদের হাতে নতুন করে অস্ত্র তুলে দেয়। ফের আদানি ইস্যুতে অচল হয় সংসদ। সব মিলিয়ে ২০২৪-এও বছরভর চর্চায় ছিলেন আদানি। যার রেশ থাকবে ২০২৫ সালেও।
শেখ হাসিনা: ২০২৪ সাল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দুর্ভাগ্যের বছর। এ বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশে হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হয় গণআন্দোলন। যার শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশের সংরক্ষণ পদ্ধতির প্রতিবাদে। পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণআন্দোলনের রূপ নেয়। যার জেরে বাংলাদেশের মসনদ থেকে সরতে হয় হাসিনাকে। কোনওক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে এ দেশে পালিয়ে আসেন মুজিবকন্যা। আপাতত এ দেশেই কোথাও রয়েছেন হাসিনা। ভারত থেকেই নিয়মিত বিবৃতি দিয়ে চলেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী: প্রায় দুদশক সক্রিয় রাজনীতিতে থাকার পর এ বছরই প্রথমবার নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রবেশ কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর। কেরলের ওয়ানড় কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দাদা রাহুল গান্ধীর চেয়েও বেশি ব্যবধানে জেতেন তিনি। তবে শুধু প্রথমবার সংসদে প্রবেশ করাই নয়। ২০২৪ সালে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শিরোনামে থেকেছেন আরও একাধিক কারণে। ২০২৪ লোকসভার প্রচারে কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। রাহুলের থেকেও তাঁর ভাষণের জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা জনমানসে বেশি ছিল বলে কেউ কেউ দাবি করেন। সাংসদ হওয়ার পরও শপথ নেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদের মাধ্যম হিসাবে নিজের 'ব্যাগ' ব্যবহার করা, সবেতেই অভিনবত্বের ছাপ রেখেছেন তিনি। সেই সঙ্গে থেকেছেন শিরোনামেও।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল: ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। রাতারাতি তাঁকেই হতে হল জেলবন্দি। পরে জামিন পেয়ে স্বমহিমায় ফিরেও এলেন। ২০২৪ সাল কেজরিওয়ালের জন্য উত্থান-পতনে ভরা। আবগারি দুর্নীতি মামলায় এ বছরের মাঝামাঝি গ্রেপ্তার হতে হয় আপ সুপ্রিমোকে। নজিরবিহীনভাবে জেলে বন্দি থাকা অবস্থাতেও মুখ্যমন্ত্রীর কুরসি ছাড়েননি তিনি। প্রায় ৬ মাস জেলে ছিলেন কেজরি। জেলে থেকেও বারবার অভিযোগ করেছেন, তাঁকে নাকি প্রাণে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে। মাস ছয়েক বাদে জামিনে মুক্তি পান আপ সুপ্রিমো। তবে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়েন তিনি। তাঁর বদলে দিল্লির কুরসিতে বসেন অতিশী। কেজরিওয়াল ঘোষণা করেন, ফের নির্বাচনে জিতে না আসা পর্যন্ত দিল্লির মসনদে তিনি বসবেন না। আপাতত কেজরি আগামী বছরের নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করে চলেছেন তিনি। সব মিলিয়ে কেজরিও চর্চায়।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়: মাঝে মাত্র কয়েকটা দিন, বিচারপতির আসন থেকে সোজা রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতীয় রাজনীতিতে এত কম সময়ের ব্যবধানে বিচারপতির কুরসি ছেড়ে সরাসরি রাজনীতিতে প্রবেশ করার কোনও নজির নেই। অভিজিৎবাবু শুধু যে সরাসরি রাজনীতিতে নামলেন তাই নয়, তমলুক থেকে বিজেপির টিকিটে সাংসদও হলেন। অবশ্য তিনি বিচারপতির আসনে থাকার সময় থেকেই সংবাদ শিরোনামে। একের পর এক বিতর্কিত রায়, একের পর এক পর্যবেক্ষণ তাঁকে বরাবর আলোচনায় রেখেছে। সাংসদ হওয়ার পরও সংসদে গিয়ে তাঁর একাধিক আচরণ আতস কাচের তলায় এসেছে। সব মিলিয়ে বছরভর চর্চায় ছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি কাম সাংসদও।
ভিনেশ ফোগাট: বছরের শুরুতে ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। তারপর অলিম্পিকে যোগ দিয়ে অসামান্য পারফরম্যান্সে ফাইনালে উঠে যাওয়া। তারপর মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় পদক হাতছাড়া হওয়া। চলতি বছরের শুরুর দিকটায় ভিনেশ ফোগাট শিরোনামে ছিলেন ক্রীড়া সংক্রান্ত কারণে। শেষের দিকে তিনি শিরোনামে থাকলেন রাজনীতির জন্য। অলিম্পিকে হৃদয়ভঙ্গের পর ভিনেশ কংগ্রেসে যোগ দেন। অভিযোগ করেন, তাঁকে যথেষ্ট সাহায্য করেনি ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা। পরে কংগ্রেসের টিকিটে হরিয়ানা থেকে বিধায়কও হয়েছেন তিনি।
গৌতম গম্ভীর: মেন্টর হিসাবে কলকাতা নাইট রাইডার্সে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই শিরোনামে গৌতম গম্ভীর। নাইটদের আইপিএল জিতিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গিয়েছিলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেট মহলে গম্ভীরকে 'মর্যাদা' রাতারাতি এতটা বেড়ে যায় যে তাঁকে রাহুল দ্রাবিড়ের জায়গায় ভারতীয় দলের হেডকোচ করে দেয় বিসিসিআই। তারপরও নিয়মিত শিরোনামে থেকেছেন গম্ভীর। সাপোর্ট স্টাফ বাছাই থেকে দল নির্বাচন, সবেতেই তাঁর হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। আবার এসব সত্ত্বেও ফলাফল যে খুব ভালো হচ্ছে তেমনটা নয়। গম্ভীর জমানায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আড়াই দশক বাদে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে টিম ইন্ডিয়া। আবার ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডে সিরিজ হার সাম্প্রতিক অতীতে ভারতীয় ক্রিকেটের লজ্জা। এই মুহূর্তে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে ভারতীয় দলের দায়িত্বে আছেন প্রাক্তন ব্যাটার। সেখানে ভালো ফল না হলে শীঘ্রই চাকরি খোয়াতে হতে পারে গম্ভীরকে।
সলমন খান: ২০২৪-এ সলমন খানের কোনও ছবি মুক্তি পায়নি। দু-একটি ছবিতে অতিথি অভিনেতার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বটে, তবে সেটাও বিশেষ চমকপ্রদ কিছু নয়। তা সত্ত্বেও বছরভর শিরোনামে থেকে গেলেন 'ভাইজান'। নেপথ্যে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং। চলতি বছর একাধিকবার সলমনকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে ওই কুখ্যাত গ্যাং। এমনকী তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টাও হয়েছে। সলমনের ফ্ল্যাট লক্ষ্য করে গুলি চালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের শার্প শুটার। বাবা সিদ্দিকির খুনের পর সলমনকে নিয়ে আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। ফলে ভাইজানকে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে। এমনকী, শুটিং স্পটগুলিও নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে মুড়ে ফেলতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৪ বছরটা কার্যত প্রাণভয়ে কাটাতে হল ভাইজানকে।
আল্লু অর্জুন: ‘পুষ্পা ২’ ছবির ঘোষণার পর থেকেই শিরোনামে দক্ষিণী অভিনেতা আল্লু অর্জুন। আসলে ‘পুষ্পা ২’ বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ছবির মধ্যে অন্যতম। এই ছবির পোস্টার, প্রথম ঝলক, ট্রেলার সবকিছু নিয়েই চরম উন্মাদনা ছিল দর্শকমহলে। শিরোনামে ছিলেন আল্লুও। তবে আল্লুকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চা হল ছবিটি মুক্তির পর। আসলে ‘পুষ্পা ২’র প্রিমিয়ারে একটি মর্মান্তিক ঘটনা নতুন করে শিরোনামে এনে দিল আল্লুকে। ছবির প্রিমিয়ারে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক মহিলা অনুরাগীর। ওই ঘটনায় আহত হয় এক শিশুও। চমকপ্রদভাবে ওই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় ব্যবস্থাপনার গন্ডগোলের জন্য আল্লু অর্জুনকেই গ্রেপ্তার করে তেলেঙ্গানা পুলিশ। কয়েক ঘণ্টা পর জামিন পেলেও আইনি সংক্রান্ত জটিলতায় এক রাত জেলে কাটাতে হয় তাঁকে। যা নিয়ে তোলপাড় হয় বিনোদুনিয়া।