সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পহেলগাঁও হামলার পর কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়া নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর বিতর্কিত মন্তব্যে যারপরনাই ক্ষুব্ধ জম্মু ও কাশ্মীর বিজেপি। 'ধর্মান্ধ' শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করে কাশ্মীর বিজেপির বার্তা, শুভেন্দু অধিকারীর উচিত এখানে বেড়াতে আসা। এবং এখানকার জনগণের দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদ প্রত্যক্ষ করা। পাশাপাশি তৃণমূলের পর শুভেন্দু-মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল কনফারেন্স। দলের মুখপাত্র তথা বিধায়ক তানভির সিদ্দিক শুভেন্দুর এমন মন্তব্যকে ‘লজ্জাজনক’ অ্যাখ্যা দিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন। তাঁর অভিযোগ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছেন বাংলার বিরোধী দলনেতা।
বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন সভাপতি রবীন্দ্র রায়না বাংলার বিরোধী দলনেতাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, গত তিন দশক ধরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাশ্মীরের অসংখ্য যুবক দেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। রায়না বলেন, "কাশ্মীরের জনগণই সেদিন পর্যটকদের আশ্রয় দিয়েছিল এবং নিরাপদে তাদের বাড়িতে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল। ১৯৪৭ সালে বারামুলায় পতাকা উত্তোলন করে মহম্মদ মকবুল শেরওয়ানি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি পাকিস্তানি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছিলেন"। রায়না আরও বলেন, বলেন, "দেশের নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার কাশ্মীরি যুবক তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থায় কাজ করছেন। বহু কাশ্মীরি বিজেপি কর্মী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহিদ হয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যেক নাগরিকের হৃদয় জুড়ে রয়েছে দেশপ্রেম। ফলে প্রত্যেক ভারতীয়ের উচিত জম্মু ও কাশ্মীর আসা।" এরপরই শুভেন্দু-সহ বাংলার জনগণকে কাশ্মীরিদের দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদ প্রত্যক্ষ করার জন্য উপত্যকায় আসার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর থমকে গিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবস্থা। তারপর থেকে পর্যটকদের উপত্যকায় ফেরার একাধিক পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রকে। চেনাব ব্রিজের উদ্ধোধন গিয়ে তেরঙ্গা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীও সেই বার্তাই দিয়েছিলেন। তাঁর স্পষ্ট বার্তা ছিল, কাশ্মীরের পর্যটনকে ভেঙে দেওয়ার যে চক্রান্ত হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
এরইমধ্যে গত বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বাংলায় এসে কাশ্মীরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ মানুষকে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিশ্চিন্তে কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছেন। সেই সময়ই হিন্দু বাঙালিকে কাশ্মীর যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “কাশ্মীরে যেতে হলে জম্মুতে যান। যেখানে মুসলিমের সংখ্যা বেশি সেখানে যাবেন না।” বিরোধী দলনেতার এমন মন্তব্যের পর শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে। শুভেন্দুর এমন মন্তব্যের তীব্র বিরোধীতা করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
এরপর ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্সের মুখপাত্র তানভির সিদ্দিক সোশাল মিডিয়া পোস্টে শুভেন্দুকে কার্যত তুলোধোনা করলেন। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘এটা খুবই হতাশাজনক। যে সময় দাঁড়িয়ে গোটা দেশের মানুষ জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে রয়েছেন। ঠিক সেই সময়েই পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলনেতা বিদ্বেষ, বিভেদ ভরা বক্তব্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।’ এই ডামাডোলের মাঝেই নিজের দলের থেকেই সপাটে চড় খেলেন শুভেন্দু।
