নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: লোকসভায় পেশ এক দেশ, এক ভোট বিল। প্রতিবাদে তুমুল বিক্ষোভ ইন্ডিয়া জোটের। একনায়কতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করবে প্রস্তাবিত বিলটি, এই অভিযোগে মোদি সরকারকে একহাত নিল তৃণমূল। এদিন বিল পেশের পক্ষে ভোট পড়ে ২৬৯টি, বিপক্ষে ১৯৮টি। পাশাপাশি ধ্বনি ভোটও হয় লোকসভায়। এদিন সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, 'এক দেশ, এক ভোট' বিল জেপিসিতে পাঠানোর পক্ষে। সেই মতো শেষ পর্যন্ত জেপিসিতে পাঠানো হয় বিলটি।
নির্ধারিত সময় মেনে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সংসদে এক দেশ, এক নির্বাচন বিল লোকসভায় পেশ করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল। এর পর আলোচনা পর্বে বিলের বিরোধিতায় সরব হন ইন্ডিয়া জোটের সাংসদদের। চড়া সুরে বিলটির বিরোধিতা করে তৃণমূল কংগ্রেস। বিলটি লোকসভায় পেশ হওয়ার পর বিলের বিরোধিতায় সরব হন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি গণতন্ত্রের মূল ভাবনার পরিপন্থী। পাশাপাশি সপা সাংসদ ধর্মেন্দ্র যাদব বলেন, যারা একসঙ্গে ৮ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন করাতে পারছে না, তারা কোন মুখে গোটা দেশে একসঙ্গে নির্বাচনের কথা বলে। এর পর বক্তব্য রাখতে উঠে এই বিলের বিরুদ্ধে বিজেপিকে নিশানা করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কড়া সুরে তিনি বলেন, 'দেশ নয়, এই বিলের আসল উদ্দেশ্য এই ব্যক্তির স্বার্থরক্ষা। নিজেদের ফায়দা খুঁজতে অন্যায়ভাবে এই বিল আনা হচ্ছে। বিলটিকে সংবিধানের মূল কাঠামোর বিরোধী বলেও অভিযোগ করেন কল্যাণ। এই বিল সংবিধান ও মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র বলে তোপ দাগেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ।
এদিকে বিল পেশের আগেই এই ইস্যুতে সরব হন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশাল মিডিয়ায় তাঁর দাবি, ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ সরাসরি গণতন্ত্রের উপর আঘাত। গণতন্ত্রের বৈচিত্র্যকে নষ্ট করা। রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে পোস্টে অভিষেকের দাবি, “তবে বাংলাও চুপ করে বসে থাকবে না। এর বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।” তৃণমূল সাংসদের আরও বক্তব্য, ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। তার মধ্যেই সরকার বিল পেশ করতে চলেছে। এটা মোটেই কাম্য নয়। এটা শুধু গণতন্ত্রের উপর আঘাত নয়, এতদিন ধরে দেশের গণতন্ত্রকে মজবুত করে তুলতে দেশের মনীষীরা যে এত সংগ্রাম করেছেন, তা আজ তছনছ হতে চলেছে বলে মত অভিষেকের। অন্যদিকে, জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেন, এই বিল আসলে হিমশৈলের চূড়ামাত্র। এর পিছনে আসল উদ্দেশ্য হল সংবিধান বদলে দেওয়া। বিরোধীদের স্পষ্ট অভিযোগ, এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সাংসদ এবং বিধায়ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটুকু বৈচিত্রের সম্ভাবনা রয়েছে, বিজেপির আগ্রাসী প্রচারের মুখে তা ভেঙে পড়বে। দেশের একেক রাজ্যে বিধানসভার মেয়াদ শেষ হয় একেক সময়। একসঙ্গে ভোট করাতে হলে কোনও কোনও রাজ্যের ভোট এগিয়ে আনতে হবে। কোনও কোনও রাজ্যের ভোট পিছিয়ে দিতে হবে। যা পদ্ধতিগতভাবে চরম সমস্যার।
বিরোধীদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও লোকসভায় পেশ হয়ে যায় বিলটি। এই ‘এক দেশ, এক ভোটে’র পক্ষে কেন্দ্রের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, এর ফলে নির্বাচন করার বিপুল খরচে রাশ টানা যাবে। যেমন সরকারের খরচ কমবে, তেমন রাজনৈতিক দলগুলিরও খরচ কমবে। বারবার নির্বাচনের জন্য সরকারি কাজকর্ম, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে থমকে যায়। একসঙ্গে ভোট হলে তা কমে যাবে। ভোটকর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীদের খাটুনিও কমবে।