shono
Advertisement

Breaking News

গোপনীয়তা রক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের

শীর্ষ আদালতে বড়সড় ধাক্কা খেল কেন্দ্র। The post গোপনীয়তা রক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 11:00 AM Aug 24, 2017Updated: 06:39 PM Oct 03, 2019

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের সুপ্রিম কোর্টে বড়সড় ধাক্কা খেল নরেন্দ্র মোদি সরকার। বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক রায়ে দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা মৌলিক অধিকার। এই বিষয়ে একমত ৯ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ।

Advertisement

এদিন সকালে এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন ৯ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। বিচারপতিদের দাবি, স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত সংবিধানের ২১ নম্বর ধারার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ গোপনীয়তার রক্ষার এই অধিকার। যে কোনও মূল্যেই এতে কোনও সীমারেখা টানা যায় না। লোকসভার তৃণমূল সাংসদ ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করেন। জানান, তৃণমূলনেত্রী বহুদিন আগেই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মানুষের সামাজিক সুরক্ষা রক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকার বলে দাবি করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁকে নতুন করে সঠিক বলে প্রমাণ করল।

[সুদের হার কমাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া]

ছক ভেঙে এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা পি চিদম্বরম এ প্রসঙ্গে বলেন, “১৯৪৭ সালে অর্জিত স্বাধীনতা আজ নতুন করে অর্থ পেল।” শীর্ষ আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আপ সুপ্রিমো তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এছাড়াও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সীতারাম ইয়েচুরি, রণদীপ সুরজেওয়ালা, ওমর আবদুল্লা প্রমুখ হেভিওয়েট রাজনীতিক এই রায়কে সাধুবাদ দিয়েছেন। মঙ্গলবারই তাৎক্ষণিক তিন তালাককে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে দেশবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছিল শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবারের এই রায়কেও সদর্থক বলে দাবি করছেন আইনজীবীরা। এই রায়ের ফলে ধাক্কা খেল কেন্দ্র। অর্থাৎ এবার থেকে সরকারি কোনও আইন বা সিদ্ধান্ত গোপনীয়তা রক্ষার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করলে সংবিধানের ১৪ থেকে ২১ লঙ্ঘিত হবে। সেক্ষেত্রে সরাসরি আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যাবে। আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করবে। সরকারি জনসেবামূলক প্রকল্প, আয়কর ক্ষেত্র, পাসপোর্ট ও প্যান কার্ড তৈরির ক্ষেত্রে কোনও নাগরিকের পারিবারিক মেডিক্যাল তথ্য, ব্লাড গ্রুপ, ফোন নম্বর, জন্ম-তারিখ ইত্যাদি ব্যক্তিগত তথ্য দাবি করতে পারবে সরকার।


তবে অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হলে সরকারকে আইনি যুক্তি দেখাতে হবে। সম্প্রতি বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে আধার কার্ডকে বাধ্যতামূলক করার জন্য যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছিল কেন্দ্র, সেই প্রয়াস এক ধাক্কায় অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ভিত্তিতেই আধার মামলা-সহ আরও ২৩টি মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানালেন আইনজীবীরা। আধার বাধ্যতামূলক কি না পৃথক মামলায় তার রায় দেবে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা হয়। মামলাকারীদের দাবি, আধার গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার পরিপন্থী।


সম্প্রতি জনসেবামূলক প্রকল্পের অধীনে না থাকা বিভিন্ন ক্ষেত্র তথা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, আয়কর রিটার্ন ফাইল করা, নতুন ও পুরনো মোবাইল নম্বর যাচাই-ইত্যাদি বিষয়ে আধার একপ্রকার বাধ্যতামূলক করে ফেলে কেন্দ্র। মামলাকারীরা দাবি করেছিলেন এর মাধ্যমে কোনও ব্যক্তিগত ও বায়োমেট্রিক্যাল তথ্যই আর গোপন রাখা যাচ্ছিল না। ভুল কোনও কাজে সেসব তথ্য ব্যবহৃত হওয়ার ভয় থেকে যাচ্ছিল। ভয় থাকছিল বাইরে জানাজানি হওয়ার। তবে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘গোপনীয়তা’ বিষয়টি অস্পষ্ট হওয়ায় তা কোনওভাবেই মৌলিক অধিকার নয়। দুই পক্ষের এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে উঠে এসেছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন – গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার কি সংবিধানে নির্দেশিত মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? সেই প্রশ্নের উত্তরে শীর্ষ আদালত স্পষ্ট করে জানাল, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারেরই অংশ। প্রধান বিচারপতি খেহর ছাড়া ওই বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি জে চেলামেশ্বর, এস এ বোবড়ে, আর কে আগরওয়াল, আর এর নরিম্যান, এ এন সাপরে, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, এস কে কউল ও এস অাবদুল নজির।

[ওবিসি তালিকাভুক্তদের শ্রেণিবিন্যাস করে আলাদা সংরক্ষণ চালু করতে চায় কেন্দ্র]

এই মামলায় টানা তিন সপ্তাহ ধরে সব পক্ষের মন্তব্য শোনে শীর্ষ আদালত। এর আগে গত ২ আগস্ট রায় দান স্থগিত রেখেছিল। ৯ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে গোপনীয়তাকে সংবিধানের মৌলিক অধিকার হিসাবে ঘোষণার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি, কারণ ও প্রমাণ পেশ করে বিভিন্ন পক্ষ। শুনানির সময় বিভিন্ন পক্ষের কৌঁসুলি হিসাবে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল, অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা, অরবিন্দ দাতার, কপিল সিবাল, গোপাল সুব্রমনিয়াম, শ্যাম দিবান, আনন্দ গ্রোভার, সি এ সুন্দরম এবং রাকেশ দ্বিবেদী প্রমুখ।

আদালতকে কেন্দ্র জানায়, গোপনীয়তার অধিকার নিরঙ্কুশ নয়। গোপনীয়তার অধিকার মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য হলেও সব ধরনের গোপনীয়তা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ থেকে পাঠানোর পর ১৮ জুলাই এই সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করা হয়। আবেদনকারীরা আদালতে দাবি করে, আধার প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ ও আদানপ্রদান গোপনীয়তা রক্ষার ‘মৌলিক’ অধিকার লঙ্ঘন। অ্যাটর্নি জেনারেল তাঁর দাবির ব্যাখ্যায় শীর্ষ আদালতে বলেন, ‘তথ্যের গোপনীয়তা’ গোপনীয়তার অধিকার নয় এবং তা কখনওই মৌলিক অধিকারও হতে পারে না। অর্থাৎ, কেন্দ্রের অবস্থান হল, সাংবিধানিক বেঞ্চ গোপনীয়তার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য করলেও, তা যেন নিরঙ্কুশ না হয়। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্র ১৯৫০ ও ১৯৬২ সালে শীর্ষ আদালতের দু’টি রায়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছে। যেখানে বলা হয়েছিল গোপনীয়তার অধিকার মৌলিক অধিকার নয়। কিন্তু এদিন আদালত কেন্দ্রের দাবি খারিজ করে জানিয়ে দিল, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা মৌলিক অধিকার।

[আপনার স্মার্টফোনের তথ্য এবার সুরক্ষিত রাখবে কেন্দ্রই]

The post গোপনীয়তা রক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement