সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাইলটের ভুল না বিমানের জ্বালানি সুইচ বন্ধ হয়ে যাওয়া! এই শংসয়ের মধ্যেই এবার আতশকাচের নিচে এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের লেজ। আহমেদাবাদে দুর্ঘটনা নিয়ে প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রানওয়ে ছেড়ে আকাশে ওড়ার ২৬ সেকেন্ডের মধ্যে বিমান বিপর্যয়ের কারণ জ্বালানি সুইচ বন্ধ হয়ে যাওয়া। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে বন্ধ হল ওই সুইচ? পাইলটের ভুলচুক যদি না হয়, তবে কি বিমানের লেজে বৈদ্যুতিক গোলযোগের জেরে কোনও ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ সুইচ? উত্তর পেতে নতুন করে অভিশপ্ত বিমানের লেজের যন্ত্রাংশগুলিকে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তদন্তকারীরা।
সুখের কথা হল, ১২ জুন দুর্ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়া ১৭১ বিমানের অগ্রভাগ যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, লেজে তত ক্ষতি হয়নি। এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) সূত্রে জানা গিয়েছে, লেজের সব যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। এখন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এএআইবি-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওড়ার সময় কোনও গোলযোগের কারণে বিমানে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল কি না, তা যাচাই করতে লেজে থাকা যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
বিমানের দু'টি ব্ল্যাকবক্সের মধ্যে দ্বিতীয়টি থাকে লেজের দিকে। যা উদ্ধার হলেও সেটি পুড়ে যাওয়ায় তথ্য উদ্ধার সম্ভব হয়নি। এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে বিমানের ‘এপিইউ’ বা অগজিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিটটিকে। এই এপিইউ ইঞ্জিন থেকে বিমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যুৎ সরবরাহ গোলমাল হলে বিদ্যুতের যোগান দেয় ‘এপিইউ’। এছাড়াও ‘ট্রান্সডিউসার্স’ (এক ধরনের সেন্সর) এবং 'রাডার্স' নামের আরও একটি যন্ত্রকে পরীক্ষা করে দেখছেন তদন্তকারীরা। শর্ট সার্কিট হয়ে লেজে আগুন লেগেছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ১২ জুন আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছুক্ষণ পরেই মেঘানিনগরে লোকালয়ে ভেঙে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানটি। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ২৬০ জনের। তাঁদের মধ্যে ২৪১ জন সওয়ার ছিলেন বিমানে।
প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট বলছে, দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে দুই ইঞ্জিনের জ্বালানিই ‘রান’ (চালু) থেকে কাটঅফ (বন্ধ) মুডে চলে যায়। ইঞ্জিন বন্ধের ঠিক আগের মুহূর্তে একজন পাইলট অপরজনকে বলেন, ‘ইঞ্জিন বন্ধ করলে কেন?’ অপর পাইলট জবাব দেন, ‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’ ইঞ্জিন বন্ধের পর জরুরি ভিত্তিতে RAT (র্যাম এয়ার টার্বাইন) চালু করা হয়। এই RAT ইঞ্জিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়। বিমান ওড়ার সময়ে জ্বালানি ঠিকঠাক ছিল। বিমান ওড়ার সময়ে ফ্ল্যাপ সেটিং এবং গিয়ারের অবস্থাও স্বাভাবিক ছিল। সেগুলি সঠিকভাবে পরীক্ষাও করা হয়। সব মিলিয়ে যা যা প্রাথমিক রিপোর্টে এসেছে তাতে বিমানের যান্ত্রিক গোলযোগের থেকে পাইলটদের ভুলের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এর ফলেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে ‘গোল্ডেন শ্যাসি’র সাহায্যে বিস্তারিত রিপোর্টে সমস্ত জল্পনার অবসান হতে পারে।
