সুমিত বিশ্বাস: ঘড়িতে সময় তখন সকাল সাতটা। পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে সারি সারি চিতল হরিণ। তার কিছুটা দূরেই সবুজ খাঁচার দরজা খুলে দিতেই দে ছুট সে! এ যে ঘরে ফেরার আনন্দ। তাই নিজের ভিটেতে একেবারে স্বমহিমায় জিনাতসঙ্গী। নিজের ভিটে মাটিতে। লক্ষ্মীবারের সকালে জিনাতসঙ্গীর এমন ছটফটে ছবিই দেখা গেল ঝাড়খণ্ডের পালামৌতে।
ওই ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কোর এলাকায়। তবে মুক্ত বিহঙ্গের মতো নয়। 'সফট রিলিজে' কিছুটা নিয়ন্ত্রণাধীন জীবনযাপন। সঙ্গে ট্র্যাপ ক্যামেরার কড়া নজরদারি। তবে ওই নজরদারিতে নিজের শিকারের ক্ষমতা দেখালেই 'ফুল মার্কস'। চিরতরে মুক্তি পাবে এই ভবঘুরে বাঘ!
উদ্ধারের ১৩ ঘণ্টার মধ্যেই ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটির নির্দেশে একেবারে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ সফট রিলিজ করতে বাধ্য হয় পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। কারণ, জিনাতসঙ্গী ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থতা ধরা পড়ায় আর তাকে খাঁচাবন্দি করে রাখা যায়নি। প্রায় হাজার কিলোমিটার পথ পেরনোর পরেও কোন ধকলই ছিল না তার। পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর প্রজেশকান্ত জেনা বলেন, "ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে সফট রিলিজ করা হয়েছে। ট্র্যাপ ক্যামেরায় আমরা তার শিকারের ছবি দেখতে পেলেই তাকে আরও গভীর অরণ্যে মুক্ত করা হবে।"
জিনাতসঙ্গীকে সফট রিলিজের মুহূর্ত। ছবি: পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
এই 'সফট রিলিজ' কি ঠিক? সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এক কর্তার কথায়, "কয়েক একর জায়গা জুড়ে নিজের মত ঘুরে বেরিয়ে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। যে জীবনযাপনে থাকবে ক্যামেরার চোখ। অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ। সেখানে মানসিক ও শারীরিকভাবে
নিজের ১০০ শতাংশ সুস্থতার পরিচয় দিলে তবে নিজের খেয়াল খুশিমতো জীবন অতিবাহিত করার ছাড়পত্র মিলবে।" অর্থাৎ এই সফট রিলিজে সর্বোচ্চ ১ মাস নজরদারি রাখার পর গভীর অরণ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়।
যেমনটা হয়েছিল মহারাষ্ট্রের টাডোবা-আন্ধেরি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে ওড়িশার সিমলিপালে নিয়ে আসা জিনাত বা গঙ্গা ও যমুনাকে। তাদের অবশ্য সফট রিলিজ থেকে মুক্ত করতেই ঘরছাড়া হয়ে যায় তারা। জিনাত 'গঙ্গা' নামকরণে তিন রাজ্য ঘুরে উদ্ধার হয় দক্ষিণ বাঁকুড়া থেকে। যমুনাকে অবশ্য ওড়িশা এলাকা থেকেই ধরে ফেলেন সিমলিপালের কর্তারা। তাই জিনাতসঙ্গী যাতে অসাবধানবশত সফট রিলিজ থেকেই হারিয়ে না যায়, তাই বাড়তি সতর্কতা রয়েছে পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্তাদের। কারণ, এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পায়ের তলায় যে সরষে! গত ৬ মাসে প্রায় ১০০০ কিমি পথ হেঁটে বেড়িয়েছে। তাই নিজের ঘরেও ২৪ ঘন্টা কড়া নজরদারিতে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
