সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আঠারো শতকের মাইসুরু অধিপতি টিপু সুলতান একজন জটিল ব্যক্তিত্ব। ভারতীয় ইতিহাসে বরাবরই তাঁকে আংশিক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এমনই মন্তব্য করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। শনিবার বিক্রম সম্পতের লেখা 'টিপু সুলতান: দ্য সাগা অফ মাইসোর ইন্টারেগনাম ১৭৬১-১৭৯৯' বইটির উদ্বোধনে এসে তাঁকে একথা বলতে শোনা যায়।
এদিন জয়শংকর বলেন, ''সমস্ত সমাজেই ইতিহাসের চলন জটিল। এবং সেই সময়ের রাজনীতি বাধ্য করে কেবল নির্দিষ্ট তথ্যকে তুলে ধরতে। ঠিক এটাই হয়েছে টিপু সুলতানের ক্ষেত্রেও। একদিকে ভারতের উপর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ক্ষমতার বিরোধিতা করা একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। আবার নিজের প্রজা এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলির প্রতি তাঁর আচরণ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলে দেয়।'' তাঁর মতে জটিল বাস্তবকে সরিয়ে রেখে টিপু সুলতান ও ব্রিটিশদের বিরোধটুকুকেই বার বার তুলে ধরা হয়েছে।
পাশাপাশি বিদেশমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ''সম্ভবত এটাই সত্যি যে, আজকের দিনে জাতীয়তাবাদের যে ধারণা আমরা বুঝি তা সেই সময় ছিলই না। জোর করে সেই পরিচয়গুলোকে সমসাময়িক নির্মাণে ফিট করানোটা একটু চ্যালেঞ্জের চেয়ে বেশিই মনে হয়।'' জয়শংকরের প্রশ্ন, ''আমাদের অতীতকে কতটা ঝকঝকে করে তোলা হয়েছে, বিশ্রী বিষয়গুলিকে কীভাবে আলোকিত করা হয়েছে, কীভাবে শাসকের সুবিধামতো তথ্যগুলি তৈরি করা হয়েছে- এই সব মৌলিক প্রশ্নের আমরা আজ মুখোমুখি।''
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ভারতের মাইসুরু (তখনকার মহীশূর) রাজ্যের শাসক ছিলেন টিপু সুলতান। ইংরেজদের সঙ্গে মহীশূরের যুদ্ধ ইতিহাসে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতিরোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ফরাসি কূটনীতিক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন টিপুর বন্ধু। বলা হয়, 'শত্রু' ইংরেজরা টিপুর অভাবনীয় প্রতিরোধের মুখে পড়ে তাঁকে 'শের-ই-মহীশূর' উপাধি দেয়। টিপুর রাজ্যের প্রতীকও ছিল বাঘ। ২০১৫ সালে কংগ্রেসের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ের নেতৃত্বে কর্ণাটক সরকার টিপুর জন্মবার্ষিকীতে টিপু সুলতান জয়ন্তী পালন করা শুরু করে। পরে বিজেপি ক্ষমতায় এসে সেই উৎসব বন্ধ করে দেয়। শুরু হয় বিতর্ক। বিজেপি তাঁকে 'হিন্দু বিরোধী' শাসক হিসেবে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা করে। এবার বিদেশমন্ত্রীও জানালেন, টিপু এক জটিল চরিত্র।
