সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রী বিরেন সিংয়ের ইন্ধনেই কি মণিপুরে ভয়াবহ আকার নিয়েছিল জাতিহিংসা! এক অডিও টেপকে কেন্দ্র করে এই জল্পনা চরম আকার নিতেই এবার পদক্ষেপ শীর্ষ আদালতের। সন্দেহজনক ওই অডিও টেপের ফরেন্সিক রিপোর্ট তলব করল শীর্ষ আদালত। উল্লেখ্য, ২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া এই হিংসায় এখনও পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি ঘরছাড়া হয়েছেন হাজারের বেশি মানুষ।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি পিভি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে ছিল মণিপুর হিংসা মামলার শুনানি। মামলার শুরুতেই বিচারপতি পিভি সঞ্জয় কুমার বলেন, সুপ্রিম কোর্টে আসার পরেই আমি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে একটি নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলাম। আপনারা চাইলে আম মামলা থেকে সরে দাঁড়াতে পারি। যদিও তাতে কোনও আপত্তি করা হয়নি। এরপরই শুনানিতে উঠে আসে ওই সন্দেহজনক অডিও টেপের প্রসঙ্গ।
কুকি সম্প্রদায়ের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতকে বলেন, বন্ধ কামরায় এক বৈঠকে রেকর্ড করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর কথোপকথন। যেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, মেতেই সম্প্রদায়ের কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। এবং রাজ্যের অস্ত্রাগার থেকে যারা অস্ত্র লুঠ করেছিল তাঁদের আশ্রয় দিতে হবে প্রশাসনকে। আদালতকে তিনি আরও বলেন, ওই অডিও ক্লিপে ফরেন্সিক টেস্ট করেছিল দিল্লিতে অবস্থিত দেশের একমাত্র স্বতন্ত্র ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাব, 'ট্রুথ ল্যাবস'। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী ওই অডিও ক্লিপে যার গলার শব্দ শোনা যাচ্ছে, তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বিরেন সিংয়ের গলার আওয়াজ ৯৩ শতাংশ মিলে যায়। অডিও টেপ নিয়ে কুকি সম্প্রদায়ের দাবি মেনে এরপর সুপ্রিম কোর্ট সরকারি ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)কে নির্দেশ দেয়, টেপটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে সেই রিপোর্ট আদালতকে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি কুকি সম্প্রদায়কে নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁদের দাবি সপক্ষে তথ্য প্রমাণ পেশ করার জন্য। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৪ মার্চ।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাস থেকে জাতি সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল মণিপুর। বেলাগাম খুন, ধর্ষণের পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বহু ঘরবাড়ি। মাঝে কিছুটা বিরতির পর সেপ্টেম্বর মাসে নতুন করে হিংসা মাথাচাড়া দেয় মণিপুরে। ইন্টারনেট বন্ধ করার পাশাপাশি জারি করা হয় কার্ফু। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। ভয়ংকর হিংসার পর সম্প্রতি এই ঘটনার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান বিরেন সিং। সব পক্ষকে অনুরোধ করেন, অতীতের ঘটনা ভুলে গিয়ে সকলে যেন মিলেমিশে শান্তির পথে হাঁটেন।
