বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: সংসদে তখন আবাস যোজনা, মেট্রো প্রকল্প, মিড ডে মিল, রেশন দুর্নীতি বা শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বাংলাকে আক্রমণ করে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। অথচ, তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তৃণমূলের ভরসা তখন শুধু দুই বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি ২৭ জন সাংসদই গরহাজির!
নির্মলার ভাষণের মাঝেই চিৎকার করেন কল্যাণ। কিন্তু সেই সময় তৃণমূলের অন্য কোনও সাংসদ না থাকায় ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে টিপ্পনি উড়ে আসে। বিজেপি সাংসদরা বলতে থাকেন, 'কল্যাণবাবু চেঁচিয়ে লাভ নেই আপনার পিছনে কোন সাংসদ নেই।' এর প্রতিবাদে কল্যাণ- সৌগত দু’জনেই কক্ষত্যাগ করে চলে যান। বাকি ২৭ জন সাংসদ ছিলেন গরহাজির। বিশেষ করে নতুন নির্বাচিত সাংসদরা। কেন তখন লোকসভায় হাজির ছিলেন না, তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাঁদের হাজিরা কি শুধুই সামাজিক মাধ্যমে থাকবে? এই ঘটনাকে 'লজ্জাজনক' বলে আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান সাংসদ। তিনি জানান, বিষয়টি দলের দেখা উচিত। বিশেষ করে নতুন যে সাংসদরা এসেছেন তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি প্রকাশ্য সভায় ‘কাটমানি’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। মমতার সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তৃণমূল সাংসদদের নিশানা করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দুর্নীতি নিয়ে সরব হন। কিন্তু নির্মলা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে রাজ্য তথা তৃণমূল নেতৃত্বকে নিশানা করলেও, লোকসভায় সে সময় তৃণমূলের ২৯ জন সাংসদের মধ্যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায় ছাড়া কেউ হাজিক ছিলেন না। বর্ষীয়ান সাংসদ জানান, আমরা যখন সংসদে পা রেখেছিলাম তখন যতটা বেশি সময় পারতাম অধিবেশনে সময় দিতাম। অথচ দুর্ভাগ্যজনক আমাদের দলের তরফে যে দুজন সংসদ বক্তব্য রেখেছিলেন তারা দুজনেই হাজির ছিলেন না। সংসদ বুঝতে গেলে অধিবেশনে থাকতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়া বা নতুন নতুন জামাকাপড় দিয়ে সংসদ বোঝা যায় না।
সম্প্রতি মমতা মুর্শিদাবাদে সভায় বলেন, সরকারি প্রকল্পে কেউ টাকা চাইলে কেউ দেবেন না। আবাস যোজনার উপভোক্তাদের থেকে ৫-১০-১৫ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে এবং কারা নিয়েছে, তাও জানেন বলে দলের বৈঠকে সতর্কও করেছিলেন। নির্মলা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে কাটমানির সমস্যা এখন এত বেড়ে গিয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দলের প্রতিনিধিদের কাটমানির টাকা ফেরত দিতে বলেছেন।” এদিন কেন্দ্রীয় বাজেটে অতিরিক্ত খরচ ও মণিপুরের বাজেট নিয়ে আলোচনায় তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদ মোদী সরকারের দুর্নীতি নিয়ে সরব হন। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা কীর্তি বলেন, “২০১৪ সালে যখন মোদি সরকার ক্ষমতায় আসে, আমি ওদের দিকে ছিলাম। শুনেছিলাম, ‘না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা’। তাই আমি যে খেলাকে ভালবেসে পরিচিত হয়েছি, সেই ক্রিকেট সংক্রান্ত চারশো কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে সরকারের কাছে যাই। কিন্তু বিভীষণকে যে ভাবে লঙ্কা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, আমারও সেই হাল হয়।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, বঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। ১০ হাজার কোটি টাকার রেশন দুর্নীতি, মিড-ডে মিলে ১০০ কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে। সিএজি দু’লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত করেছে। কীর্তি আজাদের এ সব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রশ্ন তোলা উচিত। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ আয়ুষ্মান ভারতে যোগ দেয়নি। জলজীবন মিশনের কাজ শ্লথগতিতে হচ্ছে। পড়ে থাকে পিএম-উজ্জ্বলা যোজনার আবেদন। অনিয়ম ধরা পড়েছে পিএম-আবাস, বাংলা আবাস যোজনায়। রেলের প্রয়োজনীয় জমির মাত্র ২১% অধিগ্রহণ হয়েছে। মেট্রো রেলের পাঁচটি প্রকল্পের চারটির কাজ দেরিতে চলছে। নির্মলা এ কথা বলার সময়ে মাত্র দু’জন তৃণমূল সাংসদ অধিবেশন কক্ষে ছিলেন। সোমবারই অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল ঘুরে আসা সৌগত রায় এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আলোচনায় অংশ নেওয়া কীর্তি আজাদ বা অন্য তৃণমূল সাংসদরা লোকসভায় ছিলেন না। নির্মলা বলেন, “কীর্তি আজাদকে দেখতে পাচ্ছি না। তাঁর রামায়ণ ভালো করে পড়া উচিত।”
