প্রণব সরকার, আগরতলা: ডেলিভারি দিতে সামান্য দেরি তাতেই প্রকাশ্যে ডেলিভারি বয়কে অপমান করেন এক শিক্ষিকা। অসম্মান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন ডেলিভারি বয়। চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে গত তিনদিন ধরে উত্তাল ত্রিপুরা। গোটা ধর্মনগর শহরজুড়ে একটাই স্লোগান—“We Want Justice Prasenjit Sarkar”। কিন্তু তিনদিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার হননি অভিযুক্ত শিক্ষিকা।
ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। একটি পার্সেল ডেলিভারিকে কেন্দ্র করে ডেলিভারি বয় প্রসেনজিতের সঙ্গে পাঁচজনের ঝামেলা বাঁধে। অভিযোগ, তিন যুবতী ও দুই যুবক মিলে প্রকাশ্যে প্রসেনজিৎ সরকারকে অপমান ও নির্মমভাবে মারধর করে। এখানেই শেষ নয়। সমস্ত ঘটনার ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। চরম অপমান ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিখোঁজ হয়ে যান প্রসেনজিৎ। কিছুক্ষণ পর রহস্যজনকভাবে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
মৃত প্রসেনজিতের পরিবারের তরফে ধর্মনগর থানায় সুস্মিতা ভট্টাচার্য, সঙ্গীতা ভট্টাচার্য, সৌরভ ভট্টাচার্য, মেঘদ্বীপ ভট্টাচার্য ও পিউ ধরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ যদিও ঘটনার গুরুত্ব বুঝে হত্যার মামলা রুজু করেছে। কিন্তু মামলা দায়েরের পর প্রায় ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও একজন অভিযুক্তকেও গ্রেপ্তার করতে না পারায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে গুরুতর প্রশ্ন। সবচেয়ে বিস্ময়কর অভিযোগ—সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত অভিযুক্ত সঙ্গীতা ভট্টাচার্য সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় থাকলেও পুলিশের কাছে নাকি তার কোনো সন্ধান নেই! জনতার প্রশ্ন—পুলিশ ধরতে পারছে না, নাকি ধরতে চাইছে না?
ইতিমধ্যে ধর্মনগর-সহ বিভিন্ন জায়গায় মৌন মিছিল, থানায় ডেপুটেশন, প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত হলেও পুলিশের ‘কালঘুম’ ভাঙেনি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত যুব সমাজ ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। পুলিশ সুপার অবিনাশ রাই জানান,“রবিবার ধর্মনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের বাড়িতে একাধিকবার হানা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। খুব শীঘ্রই দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।”
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত সঙ্গীতা ভট্টাচার্য একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। ত্রিপুরেশ্বরী শিশু তীর্থ স্কুলে এসিস্ট্যান্ট টিচার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।এই ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে বরখাস্ত করেছে। গোটা ঘটনায় সরব হয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। তিনি জানান, দ্রুত ন্যায়বিচার পাবেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু কবে মিলবে বিচার? বাড়ছে আমজনতার ক্ষোভ।
