সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৬ নভেম্বর, ২০১৩ এবং ২১ মে, ২০১৮। দুটো দিনের দূরত্ব প্রায় বছর পাঁচেক। ঘটনাপঞ্জিতে তেমন কোনও মিলও নেই। তবু দুটো দিনেই বোধহয় ক্রীড়াবিশ্ব তার নিজস্ব ক্যালেন্ডারে লাল দাগ দিয়ে রাখবে। হ্যাঁ, বছর পাঁচেকের ব্যবধানে দুটো দিন মিলে গিয়েছে দুই কিংবদন্তির আবেগ, যন্ত্রণা আর চোখের জলে। প্রথমদিন ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন শচীন তেন্ডুলকর। আর দ্বিতীয়দিন বার্সাকে বিদায় জানালেন ইনিয়েস্তা। আর দুই বিদায়ের মুহূর্তেই ভিড়ের মধ্যে তাঁরা হয়ে উঠলেন অপূর্ব একা। কেরিয়ারের একেবারে বেলাশেষে পিচে প্রণাম করেছিলেন শচীন। সারা বিশ্ব দেখেছিল এক ভক্ত যেন তাঁর আরাধ্যের সামনে মাথা নত করছেন, শেষবার। ঠিক একইভাবে বার্সা ছাড়ার মুহূর্তে অন্ধকার মাঠে একা বসে থাকলেন ইনিয়েস্তা। সেখানে সমর্থক নেই, অনুগামী নেই, ক্লাব নেই, প্রতিপক্ষ নেই। থাকে শুধু অন্ধকার আর মুখোমুখি বসিবার স্মৃতি ও সত্তা।
[দুর্ঘটনার জেরে পুলিশের গাড়িতে ধাক্কা, রবীন্দ্র জাদেজার স্ত্রীকে ‘শারীরিক হেনস্তা’]
আসলে এই বোধহয় সেই বিজনে নিজের সঙ্গে দেখা। উপরের দুটি ছবির মধ্যে তাই মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই। একটি বার্সেলোনার ক্যাম্প ন্যু, আরেকটি মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ের। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে পৃথিবীর দু প্রান্তের দুটি আলাদা খেলার আলাদা খেলোয়াড়ের ছবি, এর মধ্যে মিলের থেকে অমিলই হয়তো বেশি। একটু ভাল করে দেখলেই হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে সেই মিল। বোঝা যাবে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণা প্রকাশ পেয়েছে দুটি ছবিতেই। বার্সেলোনা অধিনায়ক আন্দ্রে ইনিয়েস্তার বিদায়বেলা যেন মনে করাল মাস্টার ব্লাস্টারের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর মুহূর্তকেই।
[মেসির কাঁধে ভর করেই বিশ্বজয়ের স্বপ্ন, দল ঘোষণা আর্জেন্টিনার]
ভালবাসার, আবেগের, যন্ত্রণার… কিংবা নতুনভাবে শুরু করার আগে একবার শেষ বিদায় জানাতে এসেও ‘ছেড়ে যাওয়া যায় না’-র আবেগ। গোটা ন্যু ক্যাম্প ততক্ষণে ফাঁকা। ঘণ্টাকয়েক আগেই যেখানে ৯৯ হাজার দর্শকের হাততালির সামনে দাঁড়িয়ে ইনিয়েস্তা বলছিলেন, “…বলতে চাই, যেখানেই যাই আমার হৃদয় সবসময় এখানেই থাকবে।” শুধু হৃদয় নয়, ২২ বছরের বার্সা কেরিয়ারে ইনিয়েস্তা রেখে গেলেন অসংখ্য না ভুলতে পারা স্মৃতি।
[জমকালো সমাপ্তি অনুষ্ঠানের পরই আইপিএল ফাইনাল, মঞ্চ মাতাবেন কারা?]
বিদায়বেলায় সমর্থকদের উদ্দেশে বললেন, “এটা কঠিনতম দিন আমার। আগের ২২টা বছর অবিশ্বাস্য ভাল কেটেছে। যেটা সারাজীবন আমার সঙ্গেই থাকবে। সবাইকে মনে রাখব।” ঠিক যেমনটা ওয়াংখেড়েতে বলেছিলেন শচীন রমেশ তেণ্ডুলকর। মাঠ ছাড়ার আগে শেষবারের জন্য ওয়াংখেড়ের মাটিকে যখন প্রণাম করলেন ক্রিকেট ঈশ্বর, তখন আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেছিল গোটা স্টেডিয়াম। স্প্যানিশ ইনিয়েস্তা হয়তো প্রণাম করতে জানেন না, তাই নিজের মত করে বার্সার মাটিকে শ্রদ্ধা জানাতে বসে রইলেন মধ্যরাত পর্যন্ত। যাঁরা শেষবেলায় ব্যাগ গোছাচ্ছিলেন, তাঁদেরই চোখে পড়ে গেল মাঠের মাঝখানে। গোটা মাঠ অন্ধকার। শুধু সেন্টার সার্কেলে একা বসে একজন। স্প্যানিশ মায়েস্ত্রো। খালি পা। হাতে মোবাইলে কাউকে মেসেজ পাঠিয়ে যাচ্ছেন। তার পর শূন্য চোখে কিছুক্ষণ গ্যালারির দিকে চেয়ে থাকলেন। শেষ মুহূর্তের শূন্যতা হয়তো মনে করাল, সব কিছু শেষ হয়েও শেষ হয় না।
The post বার্সা বিদায়ের রাতে আবেগাপ্লুত ইনিয়েস্তা, মনে করালেন মাস্টার ব্লাস্টারকে appeared first on Sangbad Pratidin.