কাঞ্চন-মোহমায়া থেকে দূরে, এমন মানুষ ভূ-ভারতে পাওয়া কঠিন। শুধু সাজসজ্জায় নয়, লগ্নির দুনিয়াতেও এর চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র সোনা ‘হেজ এগেনস্ট ইনফ্লেশন’ হিসাবে সুবিদিত। গোল্ড বন্ড কিনেও উপার্জনের রাস্তা খোলা। এই বাজারে বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। বিস্তারিত জানালেন নীলাঞ্জন দে
গোল্ড। সোনা, যা বিশ্বের প্রায় সর্বত্র এক সনাতন ‘হেজ এগেনস্ট ইনফ্লেশন’ বলে গণ্য, ফের জনপ্রিয়তা লাভ করছে। ইতিমধ্যে এক নতুন শ্রেণির লগ্নিকারীরা সোনায় বিনিয়োগ করছেন, আগামিদিনেও হয়তো তাঁরা লগ্নির পরিমাণ বাড়াবেন। সম্প্রতি বন্ধ হল সভারেন গোল্ড বন্ড স্কিম, ২০২২-২৩ সিরিজ ১, আবার পরেরটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের। এই প্রসঙ্গে, ভবিষ্যতের কথা ভেবে, কয়েকটি বিষয়ের দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রথমেই মনে রাখুন SGB Scheme-এ স্বল্প পুঁজি নিয়েও লগ্নি করা সম্ভব, সরকারি নিয়মকানুন এতটাই সুবিধাজনক। যেমন ধরুন, কেবলমাত্র এক গ্রামের জন্যই কেউ যদি বিনিয়োগের কথা ভাবেন, তিনিও বিফল মনোরথ হবেন না। অর্থাৎ, মিনিমাম ইনভেস্টমেন্টের পরিমাণ খুবই অল্প, তাই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীও এখানে অংশ নিতে পারেন। অবশ্য, এও বলে রাখি যে সরকার আপার লিমিট (উচ্চসীমা) বেঁধে রাখেন, এবার যে SGBটি এসেছিল তার জন্য সর্বোচ্চ লিমিট ছিল ৪ কিলোগ্রাম।
[আরও পড়ুন: সকলের জন্য বিমা, প্রয়োজন সরকারি স্তরে ইতিবাচক নীতি]
এবার আসি আপনার রোজগারের সম্ভাবনায়। বন্ড তো কিনলেন, কী রকম সুদ পাবেন? ইনভেস্টমেন্ট অ্যামাউন্টের উপর ২.৫ শতাংশ রেট অফ ইন্টারেস্ট ধার্য করা আছে, তবে ভবিষ্যতে তা কত হবে এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সাধারণত যা ব্যাংকের সুদ থাকে (মনে রাখুন, সুদের হার বাড়ছে, তাই ডিপোজিটরের রোজগারও এখন বেশি) তার থেকে বেশ কিছুটা কম। তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন, মানুষ যদি কমই পাবেন, এখানে লগ্নি আদৌ করবেন কেন? উত্তর হল, গোল্ড মার্কেটে বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। মুদ্রাস্ফীতির যুগে লগ্নিকারীরা এখানে টাকা ঢেলেছেন, এবং দামও যে বেড়েছে তা তো জানাই আছে। SGB-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সেটি এক্সচেঞ্জে ‘ট্রেডেবল’-মানে সুযোগ বুঝে আপনি তা বিক্রি করতে পারেন। অনেকে তা করেও থাকেন।
সুদ কীভাবে পাওয়া যায়? এই যে ২.৫ শতাংশের কথা বলেছি, তা আপনার হাতে ইন্টারেস্ট হিসাবে আসবে প্রতি ছয় মাস অন্তর। ইস্যুর তারিখ থেকে হিসাব কথা শুরু হবে। এখানে বলে রাখা ভাল, এবং ‘ট্রেডেবল’ জেনে বুঝতেই পেরেছেন, যে SGB আপনি অনলাইন কিনতে পারবেন, এবং ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে তা হোল্ড করতেও পারবেন। পেপারলেস ব্যবস্থা পছন্দসই আজকাল প্রায় সকলেরই। সত্যি বলতে কি, অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন করায় আমিও সকলকে উৎসাহ দিতে চাই। তার একটা ছোট কারণ হল, প্রতি গ্রাম সোনা একটু হলেও কম দামে পাবেন যদি অনলাইন মাধ্যমে কেনেন। এবার যেমন (আগেও এই নিয়ম ছিল) ৫০ টাকা কম ধার্য করা হয়েছিল অনলাইনে লগ্নিকারীদের জন্য। মানে নমিনাল ভ্যালুর থেকে ৫০ টাকা প্রতি গ্রামে কম দামে তাঁরা কিনতে পেরেছেন অ্যাপ্লিকেশনের সময়।
এবার তিনটি জরুরি বিষয় দ্রুত জেনে নেওয়া যাক।
এক, SGB আপনি স্বচ্ছন্দে কোল্যাটেরাল হিসাবে রাখতে পারেন যদি ঋণ নিতে চান। সাধারণত ঋণ প্রদানকারী সংস্থার কাছে এই বন্ড সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে।
দুই, এখানে কিন্তু কোনও GST নেই, মেকিং চার্জও হয় না। ফিজিক্যাল গোল্ড, যা আপনি অনেক সময় সোনার দোকান থেকে নেন হয়তো, তা নয়। তাই GST জাতীয় ট্যাক্স নেই এই ক্ষেত্রে।
তিন, এবং এই প্রসঙ্গে অবশ্যই জরুরি, এখানে রিডেম্পশান হলে কোনও ক্যাপিটাল গেনস ট্যাক্স দেওয়ার দরকার হয় না। ক্যাপিটাল গেনস, তা লং টার্মই হোক বা শর্ট টার্ম, অনেক লগ্নিকারীর জন্যই বছরের শেষে মাথাব্যথার কারণ হযে ওঠে। কারণ জটিল হিসাবনিকেশ চলে আসে যখন ট্যাক্স কষে নেওয়ার সময় হয়। সভারেন গোল্ড বন্ডে তা প্রাসঙ্গিক নয়।
কীভাবে ধার্য হয় বন্ডের নমিনাল ভ্যালু?
রিজার্ভ ব্যাংক পরিষ্কার জানাচ্ছে যে সোনার ‘সিম্পল অ্যাভারেজ ক্লোজিং প্রাইস’ এখানে বড় ভূমিকা পালন করে। এই দামটি ঠিক করে ইন্ডিয়া বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন। তিনটি নির্দিষ্ট দিনের (সাবস্ক্রিপশন পিরিয়ডের ঠিক আগের সপ্তাহে) গড় দামটি নেওয়া হয়। এবার, অর্থাৎ শেষ SGB ইস্যুর সময়, এই দাম দাঁড়িয়েছিল ৫,০৯১ টাকা (প্রতি গ্রামে)। নমিনাল ভ্যালুর ৫০ টাকার কম দিয়ে প্রাথমিক ভাবে যে লগ্নিকারীরা ডিম্যাটে কিনেছেন, তাঁরা দিয়েছেন ৫,০৪১ টাকা গ্রাম-প্রতি। এখানে বলি, যদিও মূলত ক্রেতারা ইন্ডিভিজুয়াল ইনভেস্টর হন, SGB-এ লগ্নির ক্ষেত্রে অন্য শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা স্বাগত। অর্থাৎ ট্রাস্ট বা চ্যারিটেবল ইন্সটিটিউশন হলেও কোনওবাধা নেই।
কতদিনের জন্য এই বন্ড সচল থাকে, মানে পিরিয়ড অফ ইনভেস্টমেন্ট মোট কত?
বন্ডের টেনিওর আট বছর, যদিও প্রিম্যাচিওর রিডেম্পশন অপশন নেওয়া সম্ভব পাঁচ বছরের পর থেকে। তাই সময়ের আগে ‘এক্সিট’ করাও দুরূহ কোনও কাজ নয়।