অর্ণব আইচ: ঘুপচি ঘরটিতে ল্যাপটপের স্ক্রিনের উপর চোখ রেখে বসে রয়েছে লোকটি। ল্যাপটপে চলছে আইপিএল ম্যাচ। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে ঘন ঘন মেসেজ। প্রত্যেকটি বলের আগে অনলাইন ‘বেটিং’। কোনও জুয়াড়ি বোলিংয়ের উপর, আবার কেউ বা ব্যাটিংয়ের উপর ধরছে বাজি। জিতলেই বাজিমাত। তাই রাত আটটার পর থেকে মধ্য কলকাতার পোস্তা থানা এলাকার রাজা ব্রজেন্দ্র নারায়ণ রোডের ঘুপচি ঘরটিতে ব্যস্ততার সীমা নেই। কিন্তু এত ব্যস্ততার মধ্যে কলকাতার ‘বেটিং’ ডনরা নজর রাখেনি, কখন বাড়িটি ঘিরে নিয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। পুলিশ আসার খবর পেয়ে দরজা খুলে কয়েকজন দৌড়ে পালায়। কিন্তু ল্যাপটপ আর মোবাইল গুছিয়ে ওঠার আগেই বুধবার বেশি রাতে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ওই এলাকারই বাসিন্দা তথা ক্রিকেট বেটিং ‘বুকি’ সঞ্জয় মালি। ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় একাধিক মোবাইল ও ল্যাপটপ।
[আইপিএল উৎসবে লোভনীয় অফারেই হোক পেটপুজো, চলে আসুন শহরের এই সব রেস্তরাঁয়]
শহরে আইপিএল ম্যাচ শুরু হতেই সক্রিয় অনলাইন ক্রিকেট বেটিং চক্র। মধ্য কলকাতার পোস্তা থেকে গ্রেপ্তার হল শহরে ক্রিকেট বেটিং চক্রের সঞ্জয়। পুলিশের নজরে সঞ্জয়ের সঙ্গে জড়িত বেটিং চক্রের আরও তিন মাথা দিলীপ শর্মা, অনিল আগরওয়াল ও মণীশ শর্মা। তারা তিনজনই পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে আগেও ক্রিকেট বেটিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল।
গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগ, শুধু ল্যাপটপ ও মোবাইলের মাধ্যমেই কলকাতায় বসে মুম্বই-সহ দেশের বড় শহরগুলির বেটিং ডনদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছিল। আবার অন্যদিকে, কলকাতা ও অন্যান্য শহরের ক্রিকেট জুয়াড়িরা যোগাযোগ রাখছিল তাদের সঙ্গে। মোবাইল ব্যবহার করলে ধরা পড়ে যেতে পারে পুলিশের কাছে, তাই অনলাইন ক্রিকেট বেটিংই সহজ মনে হয়েছিল তাদের। গোয়েন্দাদের কাছে খবর, সারা দেশেই ক্রিকেট বেটিংয়ের মাথারা তৈরি করেছে নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্ক। মূলত হোয়াটসঅ্যাপ-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই যোগাযোগ রাখত তারা। কোন ক্রিকেটারের বোলিং বা ব্যাটিংয়ের পিছনে কত টাকা ধরা হবে, তা অনলাইনেই জানিয়ে দেওয়া হত। জুয়াড়িরা অনলাইনে টাকা পাঠিয়ে বাজি ধরত। আবার যে জুয়াড়িরা জিতত, তাদেরও অনলাইনে জেতার টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হত।
[শৌচাগারের জলে ভাসছে পুলিশ সুপারের দপ্তর, রেলের স্বচ্ছতায় উঠল প্রশ্ন]
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পদ্ধতিতে বেটিং চলছে জানতে পেরে গোয়েন্দাদের একটি টিমের কয়েকজন সদস্য জুয়াড়ি সেজেই ‘বেটিং বুকি’দের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করে। সেই সূত্রেই পোস্তার ওই বাড়িটির সন্ধান পাওয়া যায়। ধৃতকে জেরা করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত বাকিদেরও খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
The post অনলাইনে রমরমিয়ে ক্রিকেট বেটিং, পোস্তায় হানা দিয়ে ‘বুকি’ ধরলেন গোয়েন্দারা appeared first on Sangbad Pratidin.