সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাউথগেটের ছেলেরা সেমিফাইনালে উঠতেই কথাটা শুরু হয়েছিল। অনেকেই বলছিলেন, ফুটবলের এবার ঘরে ফেরার পালা। কিন্তু ক্রোটদের নাছোড় সংগ্রাম বদলে দিয়েছে ইতিহাসের গতিমুখ। আর এবার তাই ঘরে ফেরা নয়, বরং নতুন ঘর খোঁজার পালা শুরু হল ফুটবলের। ক্রোয়েশিয়ার জয়ের পর এই টুইট অভিনেতা রণদীপ হুডার।
[ দ্বিতীয় গোল হতেই ভাঙচুর শুরু লন্ডনে, হেরে তাণ্ডব ইংরেজদের ]
অনেকের মনের কথাই যেন এক টুইটে বলে দিয়েছেন অভিনেতা। রাশিয়ায় যেদিন রবি উইলিয়ামস পপের জাদু ছড়াচ্ছিলেন, সেদিন কে ভেবেছিল সবথেকে চমকপ্রদ ম্যাজিক তোলা আছে ক্রোটদের বুটে! তখন মেসি-রোনাল্ডো-নেইমারে বুঁদ ফুটবলপ্রেমীরা। ধ্রুপদী ল্যাটিন ফুটবল শিল্পের আরাধনা চলছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বকাপ যত এগোতে থাকল, দেখা গেল মিথ ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। মহাতারকা খসে পড়ছেন খ্যাতির আকাশ থেকে। সেই তারাখসা স্বপ্নভঙ্গের ছাই থেকেই আবার জন্ম হচ্ছে নতুন তারকার। বিশ্বকাপ তো নতুন তারাদেরই ধাত্রীভূমি। কত আলো যে ছড়িয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তবু রাশিয়া বিশ্বকাপ স্মরণীয় হয়ে থাকবে হিসেব-নিকেশ পালটে দেওয়ার পরিসংখ্যানে। সে তথ্য নিশ্চয়ই জানাবে ক্রোয়েশিয়া নামক ৪৫ লক্ষ বাসিন্দার একটা দেশের সামনে পরাজয় বরণ করে নিতে হয়েছে মারাদোনা-মেসির আর্জেন্টিনাকেও। জানাবে, সেমিফাইনালে তারাই হারিয়ে দিয়েছে প্রবল প্রতাপাণ্বিত ইংল্যান্ডকেও। তবু তথ্য তো সবটা বলে না। সেভাবে হয়তো বলতেও পারবে না মদ্রিচ, রাকিতিচ, পেরিসিচ, মান্দজুকিচের ঘাম কীভাবে বদলে দিয়েছে ইতিহাসের চেনা পথ। বলতে পারবে না, কোন জেদ গিয়ে অতিরিক্ত সময়ে ব্রিটিশদের জালে আছড়ে পড়ে গোল হয়ে। নিঃসন্দেহে ইতিহাস তৈরি করেছেন ক্রোটরা। তাঁদের দেশের জন্য তো বটেই। এমনকী ফুটবলের ইতিহাসেও। এই প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে তারা। এবং উঠেছে যোগ্য দল হিসেবেই। উঠেছে প্রতি সেকেন্ডে লড়াই করে। শক্তি আর স্নায়ু ১২০ মিনিট বন্ধক দিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে জয়ের সোনা। এ লড়াই যাঁরা চাক্ষুস করেছেন তাঁরাই জানবেন। তাঁরাই বলতে পারবেন, ফুটবলের ঘরে ফেরা না হোক। নতুন একটা ঘরেই ফিরবে সে। ফ্রান্সও এখনও বিশ্বকাপ পায়নি। ক্রোয়েশিয়াও নয়। দু’দলের যেই পাক না কেন, যোগ্যতমের সে ঘরে ফুটবল অসুখী থাকবে না। ফুটবলপ্রেমীদের বিশ্বাস অন্তত এমনটাই।
[ ইতিহাস ফেরাতে ব্যর্থ হ্যারি কেনরা, লুঝনিকির রাত দেখল সিংহ শিকারি ক্রোটদের ]
আর এ যদি গণতন্ত্রের চরম প্রতিষ্ঠা না হয়, তবে আর কী! অপর এক ফুটবলপ্রেমী সার্থকভাবেই এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। ক্রোয়েশিয়া তো শুধু ফাইনালেই পৌঁছায়নি, হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। যে দেশে সাম্রাজ্যবাদী রক্তের ঔদ্ধত্যে গোটা বিশ্বকে পদানত করেছে এককালে, আজ একটা মুঠির মতো দেশের কাছে মিলিয়ে গিয়েছে তাদের সব তেজ-অহংকার। খেলাকে হয়তো এরকম ইতিহাসের নিরিখে দেখা সমুচিত নয় সবসময়। কিন্তু ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীতই যখন মূলস্রোত, তখন ইতিহাস নিরপেক্ষভাবে তা দেখাও যায় না। ফলে খুব সঙ্গতভাবেই এসেছে এ কথা। ক্রোয়েশিয়ার এই সেলিব্রেশন যেন জানিয়ে দিচ্ছে, যত তিক্তই হোক, ফুটবলে আজও ওড়ে গণতন্ত্রের নিশান।
The post ফেরা নয়, ক্রোটদের হাত ধরে নতুন ঘর খোঁজা শুরু ফুটবলের appeared first on Sangbad Pratidin.