বিপ্লবচন্দ্র দত্ত ও দিব্যেন্দু মজুদার: অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ লগ্নে মহা ধুমধামের সঙ্গে মাহেশে শুরু হল জগন্নাথ দেবের ৬২৭তম চন্দন যাত্রা উৎসব। ২১ দিন ধরে ঐতিহাসিক এই চন্দন যাত্রা উৎসব চলবে। একই সঙ্গে মায়াপুরের ইসকন মন্দিরের চন্দন যাত্রাতেও দেশি ও বিদেশি ভক্তের ঢল।
এই চন্দন যাত্রা উৎসবকে ঘিরে দু’টি পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে, প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে জগন্নাথ দেব রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে আদেশ দিয়েছিলেন তাঁর সারা শরীরে যেন চন্দন লেপন করা হয়। এই আদেশ পাওয়ার পরই রাজা জগন্নাথ দেবের শরীর ঠান্ডা করতে চন্দন লেপনের ব্যবস্থা করেন।
অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনি মতে, বৃন্দাবনে মাধবেন্দ্র পুরী নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। প্রচণ্ড গরমে জগন্নাথ দেবের মাথা ধরায় তিনি ওই ব্রাহ্মণকে মলয় পর্বত থেকে চন্দন নিয়ে এসে মাথায় লেপন করতে বলেন। জগন্নাথ দেবের আদেশ পাওয়ার পরই ওই ব্রাহ্মণ নীলাচলের উদ্দেশে রওনা দেন। মলয় পর্বত থেকে চন্দন সংগ্রহের পর ফেরার পথে রেমুনাতে রাত্রিবাস করেন মাধবেন্দ্র পুরী। সেই রাতেই গোপাল তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন রেমুনাতে গোপীনাথের মন্দির আছে। সেই মন্দিরে গোপীনাথের সারা অঙ্গে যেন ওই চন্দন লেপন করেন। এরপর ওই ব্রাহ্মণ পরের দিন রেমুনার মন্দিরে গোপীনাথের সারা শরীরে চন্দন লেপন করেন। সেই সময় থেকেই চলে আসছে এই চন্দন যাত্রা।
[আরও পড়ুন: ঘরের মাঠে ডু প্লেসি-ম্যাক্সির দুরন্ত যুগলবন্দি, লিগ শীর্ষে থাকা রাজস্থানকে হারাল আরসিবি]
মাহেশের জগন্নাথ মন্দির কমিটির সম্পাদক পিয়াল অধিকারী জানান, আগামী ২১ দিন ধরে এই চন্দন যাত্রা উৎসব চললেও স্নানযাত্রার আগে পর্যন্ত ৪২ দিন ধরে জগন্নাথ দেবের মাথা ও সারা অঙ্গে চন্দন ও কর্পূর বেটে লাগানো হবে। ৪ জুন স্নান যাত্রা সম্পন্ন হওয়ার পর ২০ জুন মাহেশের ৬২৭তম রথযাত্রা উৎসবের সূচনা হবে।
এদিকে, নদিয়ার মায়াপুর ইসকন মন্দিরেও শুরু হল চন্দনযাত্রা উৎসব। ২১ দিনব্যাপী এই উৎসবের জন্য সেজে উঠেছে মন্দির চত্বর। এই উৎসবকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য সমাধি মন্দির সংলগ্ন পুষ্করিণী চত্বর বর্ণাঢ্য আলোকমালায় সাজানো হয়েছে। শুরুর দিন দেশ-বিদেশের প্রচুর ভক্ত অংশ নেন। ইসকন কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘চন্দন যাত্রা উৎসবের শুরুর দিন যে পরিমাণ ভক্তের ভিড় হয়েছে, তার তুলনায় আগামী দিন আরও বেশি ভক্তসমাগম হবে।
জানা যায়, পুরীধামে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যে মদনমোহন বিগ্রহ রয়েছে, ৫০০ বছরেরও বেশি আগের সেই বিগ্রহ নিয়েই নরেন্দ্র সরোবরে শুরু হয়েছিল চন্দন যাত্রা। পুরীধামে সেই চন্দনযাত্রায় স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। মায়াপুর ইসকন মন্দিরের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানিয়েছেন, “পুরী ধামের মদনমোহন বিগ্রহকে নিয়ে শুরু হওয়া সেই চন্দন যাত্রার ঐতিহ্যকে বজায় রেখে ইসকনের মায়াপুর সমাধি মন্দির সংলগ্ন পুষ্করিণীতে রবিবার চন্দন যাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে। আরতি, কীর্তন,ভজন, প্রদক্ষিণের মাধ্যমে পালিত হচ্ছে চন্দনযাত্রা উৎসব।