অর্ণব আইচ: নবরাত্রির মধ্যে নরবলি দিলে সন্তানধারণ করবেন স্ত্রী। তান্ত্রিকের আশ্বাসে তিলজলাতে শিশুকন্যাকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে খুন।পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছে ধৃত। তার বয়ানের সূত্র ধরে তান্ত্রিকের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।
ধৃত অলোক কুমার, বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা। গত ২০১৬ সালে বিয়ে হয় তার। গেঞ্জি কারখানায় কাজের সূত্রে স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার তিলজলায় চলে আসে। বছরের পর বছর কেটে গেলেও সন্তানসুখ উপভোগ করতে পারছিল না অলোক ও স্ত্রী। তার জেরে আত্মীয়-প্রতিবেশীকে নানা কটাক্ষের শিকার হতে হত দম্পতিকে। টিপ্পনি থেকে রেহাই পেতে অলোক একসময় প্রতিবেশীদের জানায় তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। একথা সকলকে জানিয়ে স্ত্রীকে বিহারে পাঠিয়েও দেয়।
এরপর সন্তানের আশায় নিমতলায় তান্ত্রিকের কাছে যায় অলোক কুমার। তান্ত্রিক পরামর্শ দেয়, নবরাত্রির মধ্যে বছর সাত-আটেকের কোনও ‘সুলক্ষ্মণযুক্ত’ শিশুকে বলি দিলেই সমস্যা মিটবে। সন্তানধারণ করবে তার স্ত্রী। তান্ত্রিকের কথামতো শিশুকন্যার খোঁজ শুরু করে অলোক। সে প্রতিদিনই দেখত ওই শিশুকন্যাটি সকাল সাতটা-সাড়ে সাতটা নাগাদ ফ্ল্যাটের নিচে আবর্জনা ফেলতে যায়। ‘সুলক্ষ্মণা’ কিনা, তা জানতে শিশুটির বিস্তারিত বিবরণ তান্ত্রিককে দেয়। ওই শিশুকে টার্গেট করতে বলে তান্ত্রিক। নির্দেশমতো ওই শিশুকন্যাকে বলি দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয় অলোক কুমার।
[আরও পড়ুন: ‘জরাজীর্ণ রাস্তার জন্য ছেলেদের বিয়ে হচ্ছে না’, ‘দিদির দূত’কে কাছে পেয়েই নালিশ গ্রামবাসীদের]
রবিবার সকালে শিশুকন্যাটি প্রতিদিনের মতো আবর্জনা ফেলতে যায়। তার দিকে কড়া নজর রেখেছিল অভিযুক্ত। কুকুরের চিৎকার শিশুটি ভয় পেয়ে যায়। দৌড়ে উলটো দিকের ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে। এরপর অলোক কুমার তার হাত চেপে ধরে। মুখ চাপা দিয়ে সোজা উপরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে তার মাথায় এবং কানের পাশে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর গলা টিপে ধরে অলোক কুমার। কিছুটা নিস্তেজ হয়ে যায় শিশুটি। এরপর তাকে বস্তাবন্দি করা হয়। বস্তার উপর দিয়েও হাতুড়ির সাহায্যে একাধিকবার আঘাত করা হয়। তাতেই মৃত্যু হয় শিশুটির। এরপর সে একাধিকবার তান্ত্রিকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে।
তবে তান্ত্রিকের পরামর্শমতো পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই শিশুর খোঁজে শুরু হয় পুলিশি তল্লাশি। তিলজলার ওই আবাসনের ৩২টি ফ্ল্যাট তন্নতন্ন করে খোঁজেন তদন্তকারীরা। অলোক কুমারের ফ্ল্যাটে গিয়ে প্রথমে শিশুর কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ। তবে অলোকের শরীরী হাবভাব দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। ধমকের ভঙ্গিমায় জেরা করে পুলিশ। তাতেই ভেঙে পড়ে সে। উদ্ধার হয় শিশুকন্যার দেহ। খুনের কথাও স্বীকার করে নেয় অলোক। খুনের আগে অলোক কুমার শিশুকে যৌন নির্যাতন করে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আপাতত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার অপেক্ষায় পুলিশ।