অভিরূপ দাস: পঞ্চাশটা গ্রীষ্ম, শীত, বসন্ত কাটিয়েছেন এক ছাদের তলায়। ঝগড়াঝাটি, বাগবিতণ্ডা কি হয়নি? কিন্তু ছেড়ে আসেননি একে অপরকে। বলেছেন, "পাগলি তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাবো জীবন।" এহেন ‘গোল্ডেন জুবলি’ যুগলকে পুরস্কৃত করবে কলকাতা পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড। অভিনব এ পুরস্কারের নাম ‘স্বর্ণ সঙ্গী সম্মান’। সোজা বাংলায়, মালাবদলের ৫০ বছর।
এই অভিনব পুরস্কারের প্রধান উদ্যোক্তা মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার। উৎসব কমিটির চেয়ারপার্সন কাউন্সিলর পাপিয়া ঘোষ বিশ্বাস। ১৫ আগস্ট বিকেলে ১৮/১/৩ গুরুদাস রোডে বসবে অভিনব পুরস্কারের আসর। স্বপন সমাদ্দারের কথায়, "এ প্রতিযোগিতায় নাম দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরাই খুঁজে বের করছি এমন যুগলদের।"
সমাজমাধ্যমে ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ এখন গা সওয়া। ফি মাসে অমুক অভিনেতা তমুক অভিনেত্রীর বিয়ে ভাঙার খবর শিরোনামে। নয়া প্রজন্ম বিয়ে ভাঙার আগে দুবার ভাবছে না। স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, সেখানে যাঁরা টানা অর্ধ শতাব্দী ধরে সংসার করছেন তাদের পুরস্কার প্রাপ্য বইকি। অন্তত এদের দেখে নতুন প্রজন্ম যদি একটু ‘শিক্ষা’ নেয়!
[আরও পড়ুন: কোন পথে যাবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক! প্রথমবার মুখ খলল প্রতিবেশী দেশ]
কেন চারিদিকে ঢি ঢি করছে ডিভোর্সের খবর? ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির প্রাক্তন ডিরেক্টর, পাভলভ হাসপাতালে অ্যাডভাইসরি বোর্ডের সদস্য ডা. প্রদীপকুমার সাহা আখছার ডিভোর্সের জন্য দায়ী করেছেন বাজার অর্থনীতিকে। তাঁর কথায়, "মানুষ এখন ছুটে বেড়াচ্ছে। হাতে সময় নেই। গ্যারেজে দামি গাড়ি চাই, পাঁচতারা ফ্ল্যাট চাই, সে ফ্ল্যাটে কয়েক লক্ষ টাকার ইন্টেরিয়র ডিজাইন চাই। ছুটিতে এমন জায়গায় ঘুরতে যেতে হবে যাতে বন্ধুদের তাক লেগে যায়। এই চাওয়া পূরণ করতে গিয়ে হাতে সময় নেই নতুন প্রজন্মর। নতুন যুগলরা আর একে অপরের সঙ্গে গল্প করে না। ফলে বুঝতে পারছে না একে অপরকে। একটুতেই ভাঙছে সম্পর্ক।"
নতুন প্রজন্মের এই সহিষ্ণুতার অভাবের জন্য তাঁদের অভিভাবকদের দায়ী করেছেন চিকিৎসক। তাঁর কথায়, সন্তানদের বড় করার মধ্যে অভিভাবকদের খুঁত থেকে যাচ্ছে। যাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘ফল্টি প্যারেন্টিং।’ এখন অভিভাবকরা ছেলে মেয়েদের সময় দেন না। গল্প করেন না। তার বদলে ‘গিফ্ট’ দেন। ছেলেমেয়েরাও বুঝতে পারে না সময়ের মূল্য। তাঁরাও ভাবছে দামী উপহার সবকিছুর সমাধান। ডা. প্রদীপ সাহার বক্তব্য, ‘‘কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ তার মধ্যে এই ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ। এসব দেখে যদি নতুন প্রজন্ম কিছু শেখে।’’
[আরও পড়ুন: ‘নীরজের মা আমার মায়ের মতো’, সীমান্ত ডিঙিয়ে বার্তা পাকিস্তানের সোনার ছেলে নাদিমের]
ইতিমধ্যেই পুরস্কারের মানপত্র প্রস্তুত হয়েছে। যেখানে লেখা আছে, "অবিচ্ছেদ্য জীবনসঙ্গী রূপে পারস্পরিক বিশ্বাস শ্রদ্ধা ভালোবাসার ভিত্তিতে সুগঠিত আপনাদের সমধুর সম্পর্ক বর্তমান সমাজ জীবনে উজ্জ্বল আদর্শ স্বরূপ।" ১৫ আগস্ট বিকেলে ১৮/১/৩ গুরুদাস রোডে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে গোল্ডেন জুবলি যুগলদের। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ফলের ঝুড়ি, মিষ্টি, একরাশ উপহার।