shono
Advertisement

সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানেই বাজিমাত, সুখ আসবে ঝেঁপে

সিপ নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই লগ্নিকারীদের।
Posted: 02:02 PM Jul 23, 2022Updated: 02:02 PM Jul 23, 2022

সিপ নিয়ে জানতে কৌতূহলের শেষ নেই লগ্নিকারীদের। এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ বহু বাজার বিশেষজ্ঞই। তবে তা সত্ত্বেও এখনও অনেকেই সিপ করার খুঁটিনাটি জানেন না। আর পিছিয়ে থাকতে হবে না তাঁদেরও। ‘সঞ্চয়’-এর জন্য বিশেষভাবে লেখা এই প্রতিবেদনে সিপ নিয়ে বহুল জিজ্ঞাস্য নানা প্রশ্নের উত্তর রইল সবিস্তার। লিখছেন দীপক মেহতা, ইউটিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট-সেলস

Advertisement

 

পার্জন করুন। সঞ্চয় করুন। আর করুন সিপ। সুখী থাকার যদি কোনও ফর্মূলা থাকে, তবে তা এটাই। ওয়ারেন বাফেট বলেছিলেন, “অন্যদের থেকে বেশি চতুর আমাদের হতে হবে না। বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ হলেই চলবে।” বাফেটের এই উক্তি বিনিয়োগের দুনিয়াতেও একইভাবে প্রযোজ্য। আর এক্ষেত্রে প্রথমেই যে নামটা মননে ভেসে ওঠে, তা হল SIP। সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান।

সিপ কাদের জন্য উপযোগী হবে? উত্তর-যাঁরা সময় নিয়ে, সম্পদ সৃষ্টি করতে আগ্রহী। কয়েক বছর আগেও সিপের সংখ্যা ছিল ৫০ লক্ষের কম। অথচ বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ড ক্ষেত্রে সেটাই বেড়ে হয়েছে ৫ কোটি (লাইভ সিপ)। সিপ করলে কী কী সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়, এতদিনে খুচরো বিনিয়োগকারীরা তা ভালভাবেই জেনে গিয়েছেন। আর এর জন্য সাধুবাদ প্রাপ্য ডিস্ট্রিবিউটর, অ্যাডভাইজার তথা লগ্নি উপদেষ্টা, এএমসি এবং এএমএফআই-এর।

[আরও পড়ুন: ক্ষুদ্র লগ্নিতে বৃহৎ উপার্জন, জেনে নিন স্মল সেভিংস স্কিমের খুঁটিনাটি]

সিপ হল কোনও মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে পূর্বনির্ধারিত মাত্রায় দফায় দফায় বিনিয়োগ। এতে আপনি, আপনার সুবিধামতো নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সঞ্চয় করতে পারবেন এবং সময় নিয়ে বড় ‘কর্পাস’ গড়ে তুলতে পারবেন। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই উপার্জন হয় মাসে মাসে। আর সিপ-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যমটিও হল মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমগুলিতে মাসিক ভিত্তিতে করা লগ্নি। বিনিয়োগকারীদের ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে মাসের নির্দিষ্ট তারিখে, নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ কেটে নেওয়া হয় এবং মিউচুয়াল ফান্ডগুলিতে লগ্নি করা হয়। সিপ আপনি মাসিক যেমন করতে পারেন, তেমনই দৈনিক, সাপ্তাহিক কিংবা ত্রৈমাসিকও করতে পারেন। সবটাই নির্ভর করছে আপনার অর্জিত অর্থ তথা নগদ প্রবাহের উপর। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বহু লক্ষ্যপূরণ সিপে জমানো অর্থের সাহায্যে আপনি করতে পারেন। তা সন্তানের লেখাপড়াই হোক বা বিয়ে বা নিজের বাড়ি তৈরি করা বা ফ্ল্যাট কেনা বা অবসর জীবনযাপন প্রভৃতি।

সিপ থেকে বিনিয়োগকারীরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং’-এর সুফল পান। শুধু কি তাই! নিয়মিত ব্যবধানে লগ্নি করা যেতে পারে সিপের মাধ্যমে। মাসে মাত্র ৫০০ টাকা থেকেই শুরু করতে পারেন সিপ। সিপ রেজিস্ট্রেশনের পর বিনিয়োগের প্রক্রিয়া যেহেতু স্বয়ংক্রিয়, তাই বাজারের হাল-হকিকত বুঝে লগ্নি করার মানসিকতার প্রশ্ন এখানে থাকে না। তবে লগ্নিকারীদের বুঝতে হবে সিপ কিন্তু কোনও বিনিয়োগ সংক্রান্ত পণ্য বা সামগ্রী নয় বরং বিনিয়োগ-জনিত কৌশল। তাই যদি সিপ-এর মাধ্যমে নিয়মানুগভাবে নিজের আর্থিক লক্ষ্যপূরণে ব্রতী হন, তাহলে একাধারে ঝঁুকিও কমবে আবার দীর্ঘমেয়াদী স্তরে সম্পদ সৃষ্টিতেও সুবিধা হবে।

এসটিপি-ঝুঁকি মেপে পর্যায়ক্রমে ট্রান্সফার এসটিপি হল সিস্টেম্যাটিক ট্রান্সফার প্ল্যান। যাঁরা বড় অঙ্কের টাকা লগ্নি করতে চান অথচ একবারে নয়, তাঁদের জন্য এসটিপি দারুণ ‘চয়েস’। কারণ এঁরা ঝুঁকি-বিমুখ এবং কোনওভাবেই বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়তে চান না। এই ধরনের বিনিয়োগকারীরা লিকুইড বা অন্য কোনও ডেট ফান্ডে লগ্নি করতে পারেন। এতে বিনিয়োগকারীরা নিজেদের টাকা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ইকুইটি স্কিমগুলিতে ট্রান্সফার করার সুযোগ পাবেন। কাজেই তারা ডেট ফান্ড থেকে একদিকে যেমন ‘ফিক্সড’ রিটার্ন পেতে পারবেন, তেমনই অন্যদিকে ইকু্যইটি স্কিম থেকে সম্ভাব্য রিটার্নও লাভ করবেন।

এসডব্লুপি-এমন একটি সমাধান, অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই যা পেতে চান এসডব্লুপি হল সিস্টেম্যাটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট মেয়াদ ধরে, পর্যায়ক্রমে নিজেদের মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ করা অর্থ ফিরে পেতে পারেন। অর্থাৎ এসডব্লুপি হল একেবারেই এসআইপি তথা সিপের বিপরীত। সিপ আপনাকে লগ্নি করা অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগ দেয় আর এসডব্লুপি আপনাকে ন্যাভ অনুযায়ী, পর্যায়ক্রমে লগ্নি করা অর্থ ফিরে পাওয়ার সুযোগ দেয়। আর্থিক পরিকল্পনার আওতায় এটি একটি সম্পদ বণ্টনজনিত স্তর। উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক।

ধরুন, আদিত্য ২৫ বছর বয়স থেকে উপার্জন করতে শুরু করলেন এবং নিজের প্রথম বেতন পাওয়ার পর থেকেই প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা সিপ-এর মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করতে শুরু করলেন। এইভাবে চলতে থাকার পর, ৬০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার সময় পর্যন্ত, আদিত্যর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়াল ৩.২৫ কোটি টাকা। ৩৫ বছরের কর্মজীবনে তিনি এই সম্পদ সৃষ্টি করেছেন। এবার ধরে নেওয়া যাক, তিনি প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা করে এসডব্লুপি করতে শুরু করলেন এতদিন ধরে উপার্জিত ‘কর্পাস’-এর সুবিধা লাভ করার জন্য। তিনি বাজারের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের ‘কর্পাস’-এরও বৃদ্ধি করতে পারবেন, যার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি নগদ টাকা হাতে পাবেন।

* ধরে নেওয়া হয়েছে বিনিয়োগকালের মেয়াদে লগ্নিতে রিটার্নের হার ১২%।
সুতরাং, সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্টের দ্বারা লক্ষ্যপূরণ সম্ভব, শৃঙ্খলাবদ্ধ পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টি করে, স্বপ্নকে বাস্তব করা সম্ভব। মনে রাখবেন, কোন বিনিয়োগ কৌশল থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারবেন, তা বেছে নেওয়ার আগে ‘মান্থলি ক্যাশ ইনফ্লো’ ছাড়াও ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা যাচাই করে তবেই মাঠে নামা উচিত প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর।

 

*(এই লেখা লেখকের নিজস্ব মতামত, সংস্থার বক্তব্য নয়। এটি কোনও বিনিয়োগজনিত পরামর্শ নয়, তাই বিনিয়োগকারীরা যে কোনও অ্যাসেট ক্লাস বা ইনস্ট্রুমেন্টে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেরা ভাবনা-চিন্তা করুন।

[আরও পড়ুন: ফের বাড়ছে সোনায় লগ্নির চাহিদা, গোল্ড বন্ড কিনেও খোলা উপার্জনের রাস্তা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement