সকালে ভালো, বিকেলে ব্যথায় কাতর। এমন আচমকা কষ্টে যদি জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ তাহলে ভাববেন না এটা সামান্য কিছু। ষড়যন্ত্র করে ব্যথা আসে অনেক কিছুর ইঙ্গিত নিয়ে, সেগুলি কী, তা নিয়েই কথা বললেন অর্থোপেডিক ডা. কিরণ মুখোপাধ্যায়।
হঠাৎ করেই কোথাও কিছু নেই, ঘুম থেকে উঠতেই কোমরটা সোজা করে দাঁড়াতে গিয়ে বেদম ব্যথা লাগল। কিংবা হঠাৎ দেখলেন কাঁধের একদিক অসাড় হয়ে আছে, পাশ ফিরে শুতে গেলেই কষ্ট। অথবা আচমকা করেই হাঁটুতে টান, হাত মুড়তে গেলে ব্যথা। এমন কোনও কারণ ছাড়াই কোথাও কিছু নেই কিন্তু ব্যথা এসে জুড়ে বসে মানবজীবনে। কিছুদিন থাকে তার পর আবার চলে যায়, আবার ফিরে আসে। সচরাচর কোথাও আঘাত পেলে কিংবা বয়সজনিত কারণে ব্যথা হতে পারে, কিন্তু ব্যথা বর্তমানে বয়স মানছে না। এক ঘণ্টা আগে সব ঠিক, তার পরই আচমকা ব্যথা কাবু করছে অনেককে। এমন আকচার শোনা যায়। উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো হঠাৎ হঠাৎ ব্যথার আগমন কীসের ইঙ্গিত?
ছবি: সংগৃহীত
জানতে হবে কেন হয়?
হঠাৎ পরিবর্তন: হতে পারে এক্সারসাইজের অভ্যাস নেই, হঠাৎ করেই জিমে যাওয়া শুরু করলে, ভারী কোনও বস্তু তুললে তখন ব্যথা প্রকাশ পায়। কারণ মাসেল ক্রাম্প কিংবা মাসেল ছিঁড়ে গিয়ে এই ব্যথা শুরু হয়।
গরম সেঁক বা মালিশ: কোনও কারণে কোথাও ব্যথা অনুভূত হলে তড়িঘড়ি করে গরম সেঁক, জায়গাটা মালিশ করা থেকে বিরত থাকুন। এতে ভিতরে রক্তপাত হলে ক্ষতস্থান আরও বেড়ে যায়। ফলে ব্যথা অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বরফ দিলে উপকার মেলে। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথার ওষুধ খেতে পারেন।
খনিজ মৌলের ঘাটতি: শরীরের ভিতরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না থাকে তাহলে দিনের পর দিন পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম বেরিয়ে যায়। এর সঙ্গে ভিটামিন-ডি, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি শুরু হয়। আচমকা ব্যথার এটা একটা বড় কারণ।
এই ধরনের ব্যথায় ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি অন্যতম কারণ। এটি পেশির সংকোচন, প্রসারণে ও শরীরে হাড় তৈরি হতে প্রয়োজনীয় একটি খনিজ। এর অভাবে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, নার্ভ পেশিতে যে সিগন্যাল পাঠায় তা ঠিকমতো হয় না যদি ম্যাগনেশিয়ামের অভাব ঘটে। এছাড়া এই খনিজের অভাবে শরীরে ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়াম দ্রবীভূত হতে পারে না, পেশিতে ক্র্যাম্প হয়, শারীরিক ক্লান্তি প্রকাশ পায়, হাত-পা অবশ হতে শুরু করে, ঝিনঝিন করতে থাকে। সবুজ শাক-সবজি, আমন্ড, কাজুবাদাম, কুমড়োর দানা, টফু, কলা ম্যাগনেশিয়াম উৎস।
[আরও পড়ুন: মহালয়ায় বাড়িতেই আড্ডার আসর, মোগলাই-চাইনিজ রকমারি স্ন্যাকসের রেসিপি রইল ]
জরুরি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট বা স্ট্রেস এলিমেন্ট: বেশ কিছু খনিজ পদার্থ রয়েছে যা শরীরের জন্য খুবই অল্প পরিমাণে দরকার, তাই অনেকেই মনে করেন এগুলোর ঘাটতিতে তেমন সমস্যা হবে না। খুব ভুল ধারণা। অল্প হলেও অতি গুরুত্বপূর্ণ এগুলি।
জিঙ্ক: শরীরে এর অভাব থাকলে ক্ষত নিরাময় কঠিন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে শরীরের অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বেঁধে থাকলে ব্যথা আরও বাড়তে শুরু করে।
তামা বা কপার: বয়সকালে বাতের সমস্যা দেখা দেয় তামা বা কপারের অভাবে।
ম্যাঙ্গানিজ: হাড়ের স্বাস্থ্য গঠনের জন্য এই খনিজ প্রয়োজন। কারণ দেহের ২০-৪০ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ থাকে হাড়ে। নির্দিষ্ট কোনো কাজ নয়, বরং পুরো শরীরে কাজ করে ম্যাঙ্গানিজ।
ভিটামিন ডি: এর অভাবে শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ হতেই পারে না। অযথা ব্যথার প্রকাশ ঘটে যত্রতত্র।
ক্যালশিয়ামের ঘাটতিও বড় সমস্যা
কমবয়সি অথবা মাঝবয়সিদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায় না কারণ আমরা যে সমস্ত খাবার খাই সারাদিন তাই যথেষ্ট। কিন্তু সমস্যাটা হয় অন্য জায়গায়। ক্যালশিয়াম শরীরে শোষণ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে লাগে ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি। সূর্যালোক, কর্ড লিভার অয়েলের মধ্যে যা থাকে। আমাদের সুষম আহারের মধ্যে ক্যালশিয়াম থাকলেও ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালশিয়াম শরীরে গেলেও তা শোষিত হয় না। যা বয়সকালে ডেকে আনে একাধিক হাড়ের অসুখ। কখনও দেখা যায় বয়সকালে এসে হাড় এতটাই ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে যে দাঁড়িয়ে থাকলে অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে, সামান্য পড়ে গেলেই হাত, পা কিংবা কোমর ভেঙে যাচ্ছে।
মেয়েদের মেনোপজের পর শরীরে ক্যালশিয়ামের চাহিদা বাড়ে। এই সময় রক্তে ক্যালশিয়াম বজায় রাখতে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে রক্তে মেশে। দিনের পর দিন এই ঘটনা ঘটার ফলে ডেকে আনে অস্টিওস্পোরোসিসের মতো সমস্যা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন শুধুমাত্র ক্যালশিয়াম নিয়ে নয়, ভিটামিন-ডিও পর্যাপ্ত পরিমাণে শরীরে রয়েছে কি না তাও নজর রাখতে হবে। না হলে ব্যথার উপদ্রব হতে পারে।