কৃষ্ণকুমার দাস: কোভিডের দেহ সৎকার সামাল দিতে এবার বাধ্য হয়ে অস্থায়ী বৈদ্যুতিক শ্মশান চালু করছে কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation)। ওই শ্মশানে আপাতত দু’টি চুল্লি থাকবে এবং শুধুমাত্র করোনায় মৃতের দেহই সৎকার করা হবে। নতুন ওই শ্মশানটি হবে দক্ষিণ কলকাতার ভাটচালায় ৮০ নম্বর ওয়ার্ডে, বিরজুনালা শ্মশানের সমান্তরাল রেখায় প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে নির্জন পরিবেশে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ধাপায় আরও একজোড়া নতুন চুল্লিও তৈরি করছে পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তর। পুরসভা সূত্রে খবর, মহানগরের বাগমারি ও বেলগাছিয়ার ‘সহর-বাংলা’ কবরস্থানও কোভিডে মৃত সংখ্যালঘুদের দেহ সামাল দিয়ে উঠতে না পারায় এবার বিকল্প জমি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আপাতত ধাপার নিকটবর্তী একটা বিস্তৃত জলাভূমি এলাকা পছন্দ করেছেন পুরসভার শীর্ষ আধিকারিকরা। কিন্তু এখনও পুরসভার শীর্ষমহলের তরফে ওই জমিটি নিয়ে সবুজ সংকেত না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। যদিও ধাপা ও ভাটচালায় দু’টি শ্মশান নির্মাণ শুরুর কথা শুক্রবার স্বীকার করেছেন মুখ্যপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। জানিয়েছেন,“কোভিডের মৃতের সঙ্গে করোনা পরীক্ষা ছাড়াই যারা মারা যাচ্ছেন তাঁদের দেহ নিয়ে শেষকৃত্যের সংখ্যা বাড়ছে। তাই দু’টি নতুন চুল্লির শ্মশানের টেন্ডার ডাকা হল।”
সরকারি নিয়মে দৈনিক ২৮-৩০টি কোভিড দেহ পুরসভার হাতে এলেও সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত অন্তত আরও পঞ্চাশটি মৃতদেহ আসছে। এ ছাড়া অস্বাভাবিকভাবে মারা গেলেও মৃতের পরিজনদের অনেকেই কোভিডের (COVID-19) কারণে দেহ নিজেরা নিয়ে গিয়ে সৎকার করতে চাইছেন না। বস্তুত এই কারণে ভয়ংকর কোভিড সংক্রমণের জেরে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সব মিলিয়ে দৈনিক পুরসভাকে প্রায় দু’শোটি দেহ সৎকারের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। মুখ্যপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের কথায়, “কোভিড টেস্ট না করেই যে সমস্ত রোগী হাসপাতালে যাচ্ছেন এবং রিপোর্ট আসার আগেই মারা যাচ্ছেন তাঁদের কোভিড-সন্দেহে পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মৃতের পরিজনরাও অনেকে সেই দেহ নিতে ভয় পাচ্ছেন, স্বভাবতই পুরসভার উপরেই শেষকৃত্যের দায় পড়ছে বলে সংখ্যা বাড়ছে।” পুরসভা সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতভর দাহ শেষে সব শ্মশান মিলিয়ে ১৭০টি দেহ সৎকার করেছেন পুরসভার কর্মীরা। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যায় প্ল্যাস্টিকে মোড়া মরদেহ পোড়াতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে যাচ্ছে নানা শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি। এমনকী নিমতলা শ্মশানে নতুন লাগানো তিনটি ব্লোয়ার মেশিনও ধোঁয়া বন্ধে মাঝে মধ্যেই ঠিকমতো কাজ করছে না বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরকর্মীদের অভিযোগ। দিন কয়েক আগে দেহ সৎকার সামাল দিতে নিমতলাতেই বাড়িয়ে চারটি কোভিড চুল্লি তৈরি করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যজুড়ে লাগাতার অশান্তির প্রতিবাদ, স্পিকার নির্বাচন ও বিধানসভা অধিবেশন বয়কট বিজেপির]
রাজ্য সরকারের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর থেকে দিন কয়েক আগে কোভিড দেহ সৎকারের সময় বিভিন্ন ধর্মের প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ম-নীতি মেনে যেন সৎকার করা যায়, তার জন্য ১৬টি নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সেই নিয়ম মেনে ইতিমধ্যে পুরসভার তরফে পুরোহিত, ইমাম এবং ধর্মযাজকদের তালিকা সম্পূর্ণ করেছে। সৎকারের জন্য পুরসভায় নোডাল অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে করোনা রোগীর মৃত্যু হলেও, শেষকৃত্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় পুরসভার। সঙ্গে সঙ্গে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যুও করা হচ্ছে। এবার বাড়তি শ্মশান ও কবরস্থান চালু করা স্থান সংকুলান মেটানোর কাজ শুরু করল কলকাতা পুরসভা।