অর্ণব আইচ: হর্নের শব্দে চমকে গিয়ে দুর্ঘটনা। তাতেই হচ্ছে মৃত্যু।
অবাক কাণ্ড। তবুও সত্যি।
তাই ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’-এ এবার গুরুত্ব হর্নের উপর। হর্ন নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে এবার রাস্তায় নামল ‘মুন্নাভাই’।
‘মুন্নাভাই’ না হয় একটু ধমকেই কথা বলে। কিন্তু যেখানে হর্নের শব্দে চমকে গিয়ে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, সেখানে ‘এমবিবিএস মুন্নাভাই’-এর ধমক যদি কার্যকর হয়, তাতে আর অসুবিধা কী? তাই কলকাতা পুলিশের প্রচারে ‘মুন্নাভাই’ বলছে, “ও সিগন্যাল পে ফালতু কা হর্ন মারনা জরুরি হ্যায় কেয়া?”
[ পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সাইকেল ব়্যালি কৃষকদের, উদ্যোগ তৃণমূলের ]
হর্ন নিয়ে বহু বছর ধরেই ট্রাফিক পুলিশ সতর্ক করছে সাধারণ মানুষকে। এমনকী, বছরে একটি দিন অন্তত শহরবাসীকে হর্ন না বাজাতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও বিশেষ কিছু লাভ হয়নি। অতএব ধরপাকড়। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের সূত্র জানাচ্ছে, অকারণে হর্ন বাজানোর অভিযোগে বহু গাড়ির চালককে জরিমানা করা হয়। বিশেষ করে হাসপাতাল বা স্কুলের কাছাকাছি হর্ন বাজালে নেওয়া হয় ব্যবস্থা। ট্রাফিকের এক কর্তা জানান, প্রত্যেক মাসে শহরে গড়ে প্রায় তিন হাজার চালককে হর্ন বাজানোর কারণে জরিমানা করা হয়। যদিও অনেক সময়ই দেখা যায়, একশো টাকা জরিমানা দিয়ে ফের অকারণে হর্ন বাজায় সেই চালক। সাধারণত হর্ন বাজালে শব্দদূষণ হয় ও স্বাস্থ্যের উপর তার প্রভাব পড়ে। তাই অকারণে হর্ন বাজাতে নিষেধ করা হত। কিন্তু ট্রাফিক কর্তাদের মতে, এখন সমস্যা আরও গুরুতর।
[ পার্শ্ব শিক্ষকদের বেতন একলাফে অনেকখানি বাড়িয়ে চমক শিক্ষামন্ত্রীর ]
হঠাৎ হর্ন বাজানোর ফলে চমকে যাচ্ছেন বাইক ও সাইকেল আরোহীরা। অনেক সময়ই দেখা যাচ্ছে, পিছন থেকে কোনও গাড়ি হর্ন বাজানোর কারণেই পড়ে যাচ্ছেন বাইক বা সাইকেল আরোহী। ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে মৃত্যুও। কয়েকটি দুর্ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল লালবাজার। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনা বিষয়টির মোড় ঘোরায়। পুলিশ জানিয়েছে, তারাতলা রোডে স্কুল থেকে ফেরার পথে একটি বড় মালবাহী গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় সাইকেল আরোহী এক স্কুল ছাত্রীর। আহত হয় আরও এক। এই ঘটনাটি ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে তারাতলা এলাকা। গ্রেপ্তার করা হয় ওই মালবাহী গাড়ি বা ডাম্পারের চালককে। তাকে জেরা করে ও ঘটনাস্থলে তদন্তের পর লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের আধিকারিকরা জানতে পারেন যে, এত বড় দুর্ঘটনার মূল কারণ হচ্ছে হর্নের বিকট শব্দ।
রাস্তার একপাশ দিয়ে সাইকেল চালাচ্ছিল এক ছাত্রী ও সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে ছিল তারই সহপাঠী এক কিশোরী। পিছন থেকে আসছিল ডাম্পারটি। সেটির গতিও খুব বেশি ছিল না। হঠাৎই হর্ন বাজায় ডাম্পারটি। বড় মালবাহী গাড়ির হর্নের ভারিক্কি শব্দে চমকে ওঠে সাইকেল আরোহী ওই ছাত্রী। সাইকেল থেকে পড়ে যায় দু’জনেই। ডাম্পারের ডানদিকের চাকা পিষে দেয় ওই ছাত্রীটিকে। এই দুর্ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়া হয় হর্নকে। ডিসি (ট্রাফিক) সুমিত কুমার জানান, অকারণে হর্ন বাজানোর কারণে যাতে শহরে আর কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য কলকাতাবাসীকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ও বিভিন্নভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। কলকাতা পুলিশ ফেসবুক ছাড়াও মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে, এফএম রেডিও ও পোস্টারের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, তারই অঙ্গ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে ‘মুন্নাভাই’কে। ট্রাফিক সিগন্যাল লাল থাকা সত্ত্বেও সিগন্যালে দাঁড়িয়ে অকারণে হর্ন বাজায় বহু গাড়ির চালক। ‘মুন্নাভাই’য়ের ধমক খেয়েও যদি তাঁরা সচেতন হন, দুর্ঘটনা কমতে পারে।
The post অকারণে হর্ন, দুর্ঘটনা এড়াতে প্রচারে ‘মুন্নাভাই’ appeared first on Sangbad Pratidin.