অভিরূপ দাস: তিথি-নক্ষত্র মেনে নরবলি দিলেই পুণ্যলাভ! তন্ত্রশাস্ত্রে এমন কোনও নিদান আছে বলে জ্যোতিষীরা কস্মিনকালেও শোনেননি।
তিলজলার ঘটনা সামনে আসতে শিউরে উঠছেন বাংলার গণৎকার, দৈবজ্ঞরা। যে ঘটনা ঘিরে সোমবার সকাল থেকে সারা রাজ্য তোলপাড়। সাত বছরের কন্যা খুনে গ্রেপ্তার হয়েছে তার পড়শি। পুলিশি জেরার মুখে অভিযুক্ত জানিয়েছে, এক তান্ত্রিক নাকি তাকে বলেছিল, স্ত্রীর বারবার গর্ভপাত বন্ধ করার একটাই উপায়–কোনও বালিকাকে বলি দিতে হবে। সেই তান্ত্রিককেও তন্নতন্ন করে খুঁজছে পুলিশ। কিন্তু সত্য়িই কি তন্ত্রমন্ত্রে নরবলির উল্লেখ রয়েছে? বলি দিলেই বদলে যায় ললাট লিখন? তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জ্যোতিষচর্চা করছেন অমিতাভ বন্দে্যাপাধ্যায়। পড়ে ফেলেছেন তন্ত্র জ্যোতিষশাস্ত্রের একাধিক বই। প্রবীণ জ্যোতিষী জানিয়েছেন, জাতক পারিজাত, সর্বার্থক চিন্তামণি, মানস সাগরী, ফলদীপিকা, বৃহৎ পারাশরী হোরা জ্যোতিষ তন্ত্রের কোনও বইতেই নেই বলির উল্লেখ।
[আরও পড়ুন: সেই ফুটফুটে শিশু আর নেই, মানতেই পারছে না তিলজলা, চোখের জলে ভাসছেন মা ]
জ্য়োতিষী শ্রীভাস্কর জানিয়েছেন, অ্যাস্ট্রোলজি আদতে দর্শন আর গ্রহ নক্ষত্রজনিত বিজ্ঞান। এর সঙ্গে নরবলি কেন, কোনও প্রাণীকে খুন করারই যোগসূত্র নেই। তাঁর বক্তব্য, একমাত্র কালীপুজোতেই ছাগবলির উল্লেখ রয়েছে। তাও তা বাধ্যতামূলক নয়। প্রাজ্ঞ জ্যোতিষী জানিয়েছেন, অনেকেই এখন নৃশংসতা সহ্য করতে পারে না। চালকুমড়ো কিংবা লাউ বলি দেয়। তাতে অসুবিধা নেই। কারণ পূজা পদ্ধতিতে একথা বলা নেই যে মা কালী শুধুমাত্র ছাগ বলি দিলেই খুশি হবেন। যদিও তন্ত্র, কালাজাদুতে এ ধরনের নরবলির ঘটনা নতুন নয়। ফি বছর একাধিক ঘটনা সামনে আসে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো বলেছে, এ দেশে কেরলে নরবলির ঘটনা সর্বাধিক। কালাজাদু ঠেকাতে কোনও আইন নেই দেশের। একমাত্র মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটক রাজ্য়েই অ্যান্টি সুপারস্টিশিয়াস ল বা কালাজাদু বিরোধী আইন রয়েছে।
বাংলার জ্য়োতিষীরা বলছেন, তন্ত্রমন্ত্রে নরবলি বলে কিচ্ছু নেই। অতীতে কালীপুজোয় যে পশুবলি দেওয়া হত, তার সঙ্গে জীববৈচিত্রের সম্পর্ক রয়েছে। জ্যোতিষী অনিমেষ শাস্ত্রীর কথায়, বলি না দিলেও মানুষ মুরগি, ছাগলের মাংস খায়। ফলে পুজোয় পশুবলিকে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। শহরের দিগগজ জ্য়োতিষীদের কথায়, দর্শনের সঙ্গে গণিত মিলে তৈরি হয়েছে জ্য়োতিষশাস্ত্র। কিছু লোক তুকতাক তন্ত্রমন্ত্রর অছিলায় মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। কেউ কেউ প্রচণ্ড চটেছেন ওই তান্ত্রিকের উপরে। শ্রীভাস্কর নিজেকে সংযত না রেখেই বলেছেন, ‘‘ওই তান্ত্রিককেই গ্রেপ্তার করে বলি দেওয়া উচিত।’’