shono
Advertisement

টেলি মেডিসিনের সুফল, বিনামূল্যে থ্রম্বোলাইসিস করে সেরিব্রাল আক্রান্ত রোগীকে বাঁচালেন ডাক্তাররা

সেরিব্রালে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী হতে চলেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোপাল মণ্ডল।
Posted: 05:08 PM Apr 14, 2022Updated: 10:18 PM Apr 14, 2022

গৌতম ব্রহ্ম: কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। অসাড় হয়ে পড়ছিল ডানদিক। মৃত্যুর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছিলেন গোপাল মণ্ডল। আর একটু দেরি হলেই হয়তো সব শেষ হয়ে যেত। কিন্তু হল না। একটি সরকারি প্রকল্প ও একটি সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবুর উপস্থিত বুদ্ধি বাঁচিয়ে দিল বছর পঁয়ষট্টির প্রৌঢ়কে।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাত বারোটা নাগাদ। ছেলে বাপি মণ্ডল জানালেন, “বুধবার রাত বারোটা দশ নাগাদ বাবা অসুস্থ বোধ করেন। মা দেখেন, বাবা ঘামছেন। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই আমি বাইক বের করি।” ‘থ্রি ইডিয়টসে’র স্টাইলেই বাবাকে বাইকে চাপিয়ে বাপি পৌঁছে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার সামালি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখান থেকে বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতাল। তার পরের এপিসোড রূপকথার মতো।

গোপালবাবুর চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো ও চিকিৎসক মজুত পিজি হাসপাতালের ‘বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’তে। কিন্তু বেহালা থেকে যেতে তো সময় লাগবে। রোগী তো অত সময় দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। এদিকে তাঁর ডানদিকের অসাড়তা বেড়েই চলছিল। কথাও প্রায় বন্ধ। দেরি করেননি বিদ্যাসাগরের এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসকরা। হাসপাতালের সুপার ডা. রঞ্জিত দাস জানান, “দ্রুত রোগীর মাথার সিটি স্ক্যান করানো হয়। দেখা যায়, মাথার ডানদিকে রক্ত জমাট বেঁধেছে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘হেমিপারেসিস’।”

[আরও পড়ুন: রাস্তায় দাঁড়িয়েই শিশুকে পড়াতে ব্যস্ত কলকাতার ট্রাফিক সার্জেন্ট! ভাইরাল ‘শিক্ষক পুলিশ’]

তারপর শুরু যুদ্ধ। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সাহায্য নেন স্বাস্থ্যদপ্তরের নতুন চালু করা টেলি মেডিসিন পরিষেবার। (‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ সর্বপ্রথম এই খবর প্রকাশিত হয়)। যোগাযোগ করা হয় পিজি হাসপাতালের ‘বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’-র ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে। সিটি স্ক্যানের প্লেট আপলোড করা হয় টেলিমেডিসিনের জন্য ব্যবহৃত ওয়েবসাইটে। যা দেখে বিআইএনের চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, রোগীকে দ্রুত থ্রম্বোলাইসিস করতে হবে।

সেরিব্রাল স্ট্রোকের ক্ষেত্রে থ্রম্বোলাইসিস (Thrombolysis) ব্রহ্মাস্ত্র। একটি বিশেষ ধরনের ইঞ্জেকশন রোগীর ধমনীতে প্রবেশ করিয়ে রক্তের জমাট বাঁধা অংশকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। সময়মতো এই প্রক্রিয়া করা গেলে রোগী বেঁচে যায় শুধু নয়, ঠেকানো যায় পক্ষাঘাতও। গোপালবাবুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বিদ্যাসাগরে চালু হওয়া রাজ্য সরকারের টেলি মেডিসিন পরিষেবা বাঁচিয়ে দিয়েছে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত গোপালবাবুকে। রঞ্জিতবাবু জানালেন, “ইঞ্জেকশনের দাম অনেক। খোলাবাজারে প্রায় ৪০ হাজার। যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে গোপালবাবুকে। এটা আমাদের দ্বিতীয় থ্রম্বোলাইসিস।”

[আরও পড়ুন: জি-৭ বৈঠকে ভারতকে আমন্ত্রণ করবে না জার্মানি! গুঞ্জন ওড়াল বার্লিন]

থ্রম্বোলাইসিসের পর গোপালবাবুর অসাড়তা উধাও। কথাও আর জড়াচ্ছে না। অর্থাৎ প্যারালাইসিসকে আটকে দেওয়া গিয়েছে। গোপালবাবুর স্ট্রোক হয় রাত বারোটা দশে। থ্রম্বোলাইসিস হয় ভোর চারটেয়। স্ট্রোক হওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে। তাও একটি মহকুমা হাসপাতালে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement