গৌতম ব্রহ্ম: ১৫ মিনিট ফুটিয়ে খান। তাহলেই করোনা কুপোকাৎ।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের বাইরেই বিক্রি হচ্ছিল নোভেল করোনার ওষুধ! তা-ও আবার একেবারে গ্যারান্টি সহ। ওষুধ বিক্রেতার দাবি, শুধু করোনা নয়, এই ওষুধ যেকোনও জীবাণুকেই পনেরো মিনিটে কুপোকাৎ করবে। চৈত্র সেলের ঢঙেই পসরা সাজিয়েই চলছিল ওষুধ বিক্রির তোড়জোড়। এমার্জেন্সির সামনে তখন করোনা পরীক্ষা করাতে আসা মাস্ক পরা মানুষের ভিড়। কেউ করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন, কেউ করোনা আক্রান্ত রাজ্য থেকে। কেউ আবার সর্দি-জ্বর, কাশির উপসর্গ নিয়ে। এদের অনেকেই কৌতূহলবশত চলে আসেন করোনার ওষুধ চাক্ষুষ করতে। জমে যায় ভিড়। দেখা যায়, তুলসীপাতা, জাইফল, হরিতকী, বয়রা, দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, গুলঞ্চ, যষ্ঠীমধু নিয়ে একটি বন্ধ চায়ের দোকানের টেবিলে পসরা সাজিয়েছেন এক মাঝবয়সি। নাম অরুণ কুমার সাউ। ঠাকুরপুকুরে অরুণবাবুর একটি গুমটি মুদির দোকান আছে। মাঝেমাঝে ট্যাক্সি চালান। এবার বাড়তি উপার্জনের আশায় করোনা আটকানোর ওষুধ বিক্রি শুরু করেছেন। আবার যেখানে সেখানে নয়। একেবারে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গেটের ঠিক বাইরেই।
[ আরও পড়ুন: উল্টোডাঙা বসতিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ঘটনাস্থলে দমকলের ৭টি ইঞ্জিন ]
শুক্রবার দুপুরে আচমকাই তিনি পসরা নিয়ে বসে পড়েন। বলেন, “করোনা আটকানোর আয়ুর্বেদ ফর্মুলা আমার কাছে আছে।” কিন্তু কী সেই ফর্মুলা? তুলসীপাতা, জায়ফল, হরিতকী, বয়রা, দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, যষ্ঠীমধু একসঙ্গে গুঁড়ো করে, বেটে মিশিয়ে জলে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর খাবার খাওয়ার পর চায়ের মতো এটি খান। কোন সর্দি-কাশি-জ্বর, করোনা কেউ কাছে আসবে না।” মন দিয়ে শুনলেও অরুণকুমারের কথায় প্রভাবিত হয়ে কাউকে ওষুধ কিনতে দেখা যায়নি। বেশিরভাগজনই বলেছেন “এই আয়ুর্বেদিক পাচনে করোনা আটকে যাবে, এমন কোনও প্রমাণ নেই। আমরা বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা করব।” কেউ আবার বলছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার করোনা মোকাবিলায় হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ ওষুধের কথা বলেছেন। কিন্তু তা এখানে ফুটপাতের উপর কেন বিক্রি হবে?” আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের মতে, এই ভেষজগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সুতরাং কাজ হতেই পারে। কিন্তু এভাবে অবৈজ্ঞানিক বিক্রি করে উনি আয়ুর্বেদের অসম্মান করেছেন।
দু’-একজনের চোখে প্রশ্রয় দেখে উৎসাহ পেয়ে যান অরুণকুমার। কিন্তু বিক্রি শুরুর আগেই পুলিশ এসে ভাগিয়ে দেয় তাঁকে। কিন্তু কেন এত জায়গা থাকতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এসেছেন? অরুণকুমারের উত্তর, “শুনলাম নোবেল করোনায় আক্রান্ত মানুষজন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভিড় করছেন। তাই তাদেরকে মুক্তি দিতে চলে এসেছি। আমি তো কাউকে জোর করছি না। বিশ্বাস করলে নেবেন, না করলে নেবেন না।” প্রশ্ন উঠছে, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের মত এরকম একটি হাসপাতালে যেখানে আতঙ্কে মানুষ ছোটাছুটি করছেন, আসছেন, যেখানে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, সেখানে অবৈজ্ঞানিক ভাবে এক ব্যক্তি কিভাবে মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেন?
[ আরও পড়ুন: রণক্ষেত্র দমদম সেন্ট্রাল জেল, বন্দি-পুলিশ সংঘর্ষে জ্বলল আগুন ]
The post বেলেঘাটা আইডির সামনে ঢালাও বিকোচ্ছে করোনার ‘ওষুধ’, প্রতারককে তাড়াল পুলিশ appeared first on Sangbad Pratidin.
