অর্ণব আইচ: হরিদেবপুরের যুবক খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়েছে ত্রিকোণ প্রেমে টানাপোড়েনের তত্ত্ব। তারই মাঝে নয়া সন্দেহ। পুলিশের অনুমান, ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও মোবাইল বন্দি করতেন অয়ন। তা দেখিয়ে হয়তো ব্ল্যাকমেলও করতেন দু’জনকে। আর তা নিয়ে দশমীর রাতে অয়নের সঙ্গে কিশোরী এবং তার মা বচসায় জড়িয়ে পড়ে। যার শেষ পরিণতি হয় মৃত্যু। এই সন্দেহ আদৌ কতটা সত্যি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অয়নের মোবাইলে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কোনও ছবি বা ভিডিও রয়েছে কিনা, তার খোঁজ চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
অয়নের বাবা আগেই দাবি করেছেন শুধু কিশোরীই নয়। তার মায়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল অয়নের। যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় মেয়ের প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কোনও কথাই বলছে না কিশোরীর মা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, মা, মেয়ের সঙ্গে কাটানো ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও মোবাইলে তুলে রাখত অয়ন। উদ্দেশ্য ব্ল্যাকমেলিং। তবে ছবি, ভিডিও মোবাইল বন্দি করা না-পসন্দ ছিল কিশোরী ও তার মায়ের। সম্ভবত সে বিষয়ে আলোচনা করতে দশমীর রাতে কিশোরী ফোন করে অয়নকে বাড়িতে ডেকে পাঠায়। ফোন পেয়ে প্রেমিকার বাড়িতে চলে আসেন অয়ন। প্রেমিকার বাড়িতে ঝগড়াঝাটি হয়। আর সেই ঝগড়াঝাটির মাঝেই খুন হয় অয়ন।
[আরও পড়ুন: ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা, বাড়িতে ডেকে নাবালিকাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারল অভিযুক্তর মা]
মনে করা হচ্ছে, দোতলার ঘরে খুন হন অয়ন। খুনের পর প্রেমিকার ভাই বন্ধুবান্ধবদের ডেকে পাঠায়। টাকার বিনিময়ে ম্যাটাডোরের বন্দোবস্ত করা হয়। ম্যাটাডোরে তুলে ত্রিপলে মোড়া হয় অয়নের দেহ। তারপর তা মগরাহাটের নির্জন জায়গায় ফেলে রেখে আসা হয়। ইতিমধ্যে খুনের প্রমাণ লোপাট করতে বেশ কয়েকবার ঘর মোছা হয়। এরপর ঘটনার পরদিন সকালে হরিদেবপুর থানায় যায় কিশোরী। বেশ কয়েক বছরের প্রেমিক অয়ন মণ্ডলের বিরুদ্ধে হরিদেবপুর (Haridevpur) থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করে। জেরায় অবশ্য কিশোরী জানায়, সম্প্রতি সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয়। অয়ন সন্দেহ করত অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তার।
এদিকে, অয়নের পরিবার থানায় নিখোঁজ ডায়ের করে। এরপর জানা যায় মগরাহাটে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের দেহটি অয়নেরই। পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে সরব হন অয়নের পরিবার-প্রতিবেশীরা। থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পরে কিশোরী এবং তার প্রতিবেশীর বাড়িতেও ভাঙচুর করে উন্মত্ত জনতা। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কিশোরী, তার মা, বাবা, ভাই, ভাইয়ের বন্ধু, ম্যাটাডোর চালক-সহ মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের দফায় দফায় জেরা করে এই ঘটনা সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলেই আশা তদন্তকারীদের।