অর্ণব আইচ: আইএসআইয়ের নজরে বালি ব্রিজ। পাক চর সংস্থার এজেন্টের মোবাইল থেকে বালি ব্রিজের ছবি উদ্ধার করেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। অভিযোগ, বালি ব্রিজের ছবি তুলে একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে পাচার হয়েছে পাকিস্তানে। এর পরই চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে পুলিশমহলে। গোয়েন্দাদের প্রশ্ন, তবে কি এবার পাক চর সংস্থা হাওড়া ও কলকাতার যোগসূত্র এই বহু পুরনো সেতুটিকে টার্গেট করেছে? যদিও কোনও নাশকতার ছক কষার আগেই পাক চর সংস্থার সঙ্গে যোগ থাকার অভিযোগে ভক্ত বংশী ঝা নামে যুবককে এসটিএফ আধিকারিকরা গ্রেফতার করেন। বালি ব্রিজ ছাড়াও কলকাতার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ছবি তাকে তুলে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আইএসআই। তার জন্য ধৃত অভিযুক্ত প্রস্তুতিও নেয়। তবে বালি ব্রিজের ছবি তুলে কেন ওই যুবক পাকিস্তানে পাচার করে, এবার সেই তথ্য গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন। কারণ, বিভিন্ন কোণ থেকে ওই ছবি ও ওই সেতু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য হাতে পাওয়ার পর আইএসআই নাশকতার ছক কষতে পারে, এমন সম্ভাবনা গোয়েন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। নাশকতার জন্য অনেক সময়ই আইএসআই পাক অথবা বাংলাদেশি জঙ্গি সংস্থার সাহায্য নেয়। তাই ছবি পাচারের তথ্য হাতে পাওয়ার পর এবার বালি ব্রিজের নিরাপত্তার উপর জোর দিয়েছে হাওড়া ও বারাকপুর কমিশনারেটও।
[আরও পড়ুন: শহরের মোট জনসংখ্যার আড়াই শতাংশ হকার থাকবে, পুজোর মুখে নয়া সিদ্ধান্ত কলকাতা পুরসভার]
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ধৃত পাক এজেন্ট ভক্ত বংশী ঝায়ের মোবাইল থেকে একটি বিশেষ অ্যাপ উদ্ধার করেন এসটিএফ আধিকারিকরা। ভক্ত আরুষি শর্মা নামে পাক চর সংস্থার আধিকারিক অথবা কর্মীর হানি ট্র্যাপের ‘শিকার’ হয়। যদিও আরুষি শর্মা নামটি যে ভুয়া নাম, সেই ব্যাপারে গোয়েন্দারা নিশ্চিত। আরুষি ভক্তকে জানিয়েছিল যে, তার বোন সাংবাদিক। তাই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ছবি পাঠাতে। যদিও পুলিশের মতে, ক্রমে ভক্ত বুঝতে পারে যে, সে আইএসআইয়ের হয়েই কাজ করছে। ওই মহিলাই ভক্তকে ‘সিগন্যাল’ নামে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে বলে। ওই অ্যাপের মাধ্যমে পাকিস্তানে পাচার করা হয়েছে প্রচুর জায়গার ছবি ও ভিডিও। ওই অ্যাপেই ভিডিও ও অডিও কল করে পাক চরদের সঙ্গে ভক্ত কথা বলত। সেই সূত্রে তদন্ত চালিয়ে ভক্তর মোবাইল ঘেঁটে দিল্লির অন্তত তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ছবি বিভিন্ন কোণ থেকে উদ্ধার করে এসটিএফ। বালি ব্রিজের ছবি তোলার আগে ওই তিন জায়গার বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও পাচার করা হয় পাকিস্তানে। অভিযুক্ত যুবকের ওই অ্যাপটি থেকেই রাষ্ট্রপতি ভবন, ওয়ার মেমোরিয়াল ও ইন্ডিয়া গেটের ছবি ও ভিডিও এসটিএফ উদ্ধার করে। এই ছবি ও ভিডিওগুলি পাকিস্তানে পাচার করার পিছনেও কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তাও জানার চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশ জেনেছে, ভক্ত দিল্লিতে থেকে কুরিয়র সংস্থায় কাজ করার সময়ই হানিট্র্যাপের ‘শিকার’ হয়। অনলাইনে মহিলার ঘনিষ্ঠ হয় সে। তাকে ব্ল্যাকমেল করা শুরু হয়। তখনই সে ছবি ও ভিডিওগুলি তোলে। মাস চারেক দিল্লিতে থাকার পর ওই কুরিয়র সংস্থার কাজ সে ছেড়ে দেয়। কলকাতায় এসে হাওড়ায় থাকতে শুরু করে। এখানেও ছোটখাটো চাকরি করতে শুরু করে সে। ভক্তকে জেরা করে আইএসআইয়ের নেটওয়ার্কে থাকা আরও কয়েকজনের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।