কৃষ্ণকুমার দাস: রাজ্যে ক্রমেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ফলে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। আজ বুধবার উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া বসতিতে যাচ্ছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের বিশেষ টিম। তিনদিনে অন্তত সাতজন করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়ায় ব্যারিকেড দিয়ে কার্যত সিল করে দেওয়া হয়েছে বসতির প্রবেশপথ।
বেলগাছিয়া বসতিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। নববর্ষের ছুটিতেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরভবনে করোনা—নোডাল অফিসারের সঙ্গে পরবর্তী ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। তার আগে নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গেও কথা বলেন মেয়র। বেলগাছিয়া বসতির উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে এদিন পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আজ বেলগাছিয়া বসতিতে যাচ্ছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের বিশেষ টিম। এখনও পর্যন্ত যাঁদের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে বা মারা গিয়েছেন তাঁদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে এই বিশেষজ্ঞ টিম। ওই রোগীরা করোনা পজিটিভ হওয়ার আগে কোথায় গিয়েছিলেন এবং পরে কোথায় কোথায় গিয়েছেন তাও শনাক্ত করতে চিরুনি তল্লাশি অভিযান শুরু হচ্ছে। বেলগাছিয়া বসতি থেকে সংক্রমণ যাতে ‘গোষ্ঠী সংক্রমণ’-এর পর্যায় না পৌছয় তাই এই উদ্যোগ। সন্ধ্যায় পুরভবনে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, “বেলগাছিয়া বসতিতে বিশেষ মেডিক্যাল টিম যেমন যাচ্ছে তেমনই বিশেষ জীবাণুমুক্তকরণ অভিযান চলছে।” তবে বেলগাছিয়া বসতির জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে উত্তর কলকাতার নলিনী সরকার স্ট্রিট, মাধবদাস লেন ও মোহনবাগান বসতি—সহ নানা পল্লীতে।
[আরও পড়ুন:খাবার-ওষুধের অভাব, মেক্সিকো বেড়াতে গিয়ে লকডাউনে বন্দি সল্টলেকের বৃদ্ধ দম্পতি]
সোমবার রাতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে করোনা পজিটিভ নিয়ে ভরতি হওয়া বসতির এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তারপরই এদিন জে কে ঘোষ রোডের ওই ৬১ বছরের বৃদ্ধের আত্মীয়—পরিজন—সহ আপাতত ১৪ জনকে মঙ্গলবারই রাজারহাট কোয়ারান্টাইন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্তত আরও জনা ৫০ বসতিবাসিকে কোয়ারান্টাইনে রাখা জরুরি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।পাইকপাড়া বরো—১ অফিস সূত্রে খবর, গত সাতদিনে এই বেলগাছিয়া ঘিঞ্জি বসতির আরও কয়েকজন নানা অসুস্থতায় মারা গিয়েছেন। তাঁদের পাশের ‘শহর বাংলা’ কবরস্থানে স্থানীয় ডাক্তারদের কাছ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েই সমাধিস্থ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ টিম গত ১৫ দিনে বস্তির সমস্ত মৃতের পরিজনদেরও পরীক্ষা করে দেখবেন। জানার চেষ্টা করবেন, আদৌ তাঁরা করোনার জীবাণু বহন করছিলেন কি না। ইতিমধ্যে কবর দেওয়া ব্যক্তিদের যে ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁর সঙ্গেও কথা বলবেন বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা।
[আরও পড়ুন:করোনার ভয়ে আটকে ঘুপচি ঘরে? বন্দিদশাতেও সুস্থ থাকতে খুলে রাখুন জানলা]
বেলগাছিয়ার কাউন্সিলর সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেন বসতির চার ইমাম ও আমন কমিটির মাধ্যমে বাসিন্দাদের বুঝিয়ে নিজের ঘরে আটকে থাকতে রাজি করাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বসতির বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যেতে পাশের হরেকৃষ্ণ শেঠ লেনে আবাসন দফতরের লেডিজ হস্টেলে একটি নতুন কোয়ারান্টাইন সেন্টার গড়ছে রাজ্য সরকার। নববর্ষের দিনেও সেখানে পরিদর্শন করেন অফিসাররা। ইতিমধ্যে বিবেকানন্দ রোডের লোহিয়া মাতৃসদন হাসপাতাল পুরসভা অধিগ্রহণ করে কোয়ারান্টাইন সেন্টার তৈরির কাজ শুরু করেছে। সংবাদ মাধ্যমকেও এর ভেতরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এলাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে দোকান-বাজার সমস্ত কিছু। বাসিন্দাদের এই বসতি না বেরোনোরও অনুরোধ করা হয়।
The post বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, আতঙ্কের জেরে বন্ধ বেলগাছিয়া বসতির পথ appeared first on Sangbad Pratidin.
