গোবিন্দ রায়: আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার, বিশ্বকাপজয়ী লিওনেল মেসির সফর ঘিরে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। এর দায় কার? এনিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। সোমবার তারই শুনানি ছিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল ও পার্থসারথী সেনের বেঞ্চে। তাতে একের পর এক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হন আইনজীবীরা। নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশের ভূমিকাও। এবার লেকটাউনের মোড়ে বসানো মেসির মূর্তি নিয়ে বিচারপতিরা প্রশ্ন তুললেন। মন্ত্রী তথা বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই মূর্তি বসিয়েছেন, রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সওয়ালের পর বিচারপতি পার্থসারথী সেনের প্রশ্ন, ''ওই জমি ব্যক্তিগত নাকি সরকারি? ব্যক্তিগত ইচ্ছায় কি সরকারি জমিতে মূর্তি বসানো যায়?''
সোমবার এই সংক্রান্ত শুনানির শুরুতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, মেসিকে দেখতে এত খরচ করে যাঁরা টিকিট কাটলেন, তাঁদের টাকা কীভাবে উদ্ধার হবে। আদালতও রাজ্যের আইনজীবীর কাছে তা জানতে চান। তাতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব, ''আমরা টিকিট বিক্রি করিনি। টাকা উদ্ধারের কাজও আমাদের নয়। আমরা রিকভারি এজেন্ট নই। ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছে। রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর এই ভূমিকা দেখতে পাবেন না।'' শুভেন্দুর আইনজীবীর আরও প্রশ্ন, ''মেসিকে অগ্রিম হিসাবে ৬০-৬৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। তখন টিকিটও বিক্রি হয়নি। তাহলে অগ্রিম এই টাকা কে দিল? কারা এই অনুষ্ঠানের স্পনসর ছিল?'' আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ''ইডি বা SFIO-কে দিয়ে তদন্ত হোক।''
গত ১৩ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে দর্শক নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন উচ্চ আদালতে। তিনি জানান, অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের কাছে ৪০০ টি পাস চেয়েছিল শতদ্রু দত্তর টিম। সেটা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ২৭ টি ক্লোজ প্রক্সিমিটি বা CP পাস ছিল। বাকি ৩৭৩ টি ছিল ডিউটি পাস। সোশাল মিডিয়া মনিটরিং সেলের জন্য ৬টি CP পাস দেওয়া হয়েছিল। ২৫ টি CP Pass উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তাদের জন্য ছিল, ১২ টি CP Pass রাজ্য আইবি আধিকারিকদের দেওয়া হয়েছিল। জলের বোতল নিয়ে যাওয়ার কোনও অনুমতি পুলিশ দেয়নি। কী করে জলের বোতল মাঠে পৌঁছল, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এসব শুনে বিচারপতি পার্থসারথী সেন প্রশ্ন করেন, ''আপনারা কি নিজেরা খতিয়ে দেখে CP Pass দিয়েছিলেন? নাকি আয়োজকরা যা চেয়েছে সেটা দিয়েছেন?'' তাতে কল্যাণের জবাব, ''১২ তারিখ এগুলো চাওয়া হয়েছে। সবটা দেখতে হলে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হতো। তার প্রতিক্রিয়া আরও খারাপ হতো।''
শতদ্রু দত্তর আইনজীবী বিশ্বজিৎ মান্না সওয়ালে বলেন, ''মাঠে কী করে বেশি লোক ঢুকল, সেটা আমরা বলতে পারব না। গেটের দায়িত্ব পুলিশের ছিল। পুলিশও মেসির সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়েছিল।'' শুভেন্দুর আইনজীবীর দাবি, আয়োজকদের লিখিত বক্তব্য ছাড়াই যদি প্রশাসন কাজ করে, তাহলে বুঝতে হবে যে রাজ্য এবং শতদ্রু দত্ত হাতে হাত মিলিয়েই কাজ করছিল। দীর্ঘক্ষণ আদালতে এনিয়ে সওয়াল-জবাব শেষে রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি পার্থসারথী সেন।
