সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাতারাতি উদ্বাস্তু হয়ে গেলেন অসমের ৪০ লক্ষ মানুষ৷ সোমবার নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হতে না হতেই উত্তাল দেশের রাজনীতি৷ বিতর্কের আগুন জ্বেলে নবান্ন থেকে কেন্দ্রকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকপঞ্জির অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কেন অসমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন? কেন ধর্মের ভিত্তিতে এই বিভাজন? আধার থাকা সত্ত্বেও কেন নাম বাদ? প্রশ্ন তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সংসদে আইন পাশ করে ভিটেছাড়া ৪০ লক্ষ মানুষকে বাঁচানোর দাবি জানান মমতা৷ প্রয়োজনে ভিটে হারানো অসমবাসীর জন্য বাংলার দরজা খোলা থাকবে বলেও এদিন কৌশলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাংসদের একটি দল অসম যাবেন বলেও জানান তিনি৷
[ রোহিঙ্গাদের মতোই নিয়তি! কী পরিণতি হবে নাগরিকত্ব হারানো ৪০ লক্ষ ‘অসমবাসী’র? ]
সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ধর্মের ভিত্তিতে আজ দেশের নাগরিকত্ব নির্ধারণ হচ্ছে৷ এটা বিজেপি ভোটের রাজনীতি৷ নাগরিকপঞ্জির নামে অসমে বাঙালি খেদাও চলছে৷ কিন্তু, মনে রাখতে হবে এরাও মানুষ৷ ওঁরাও দেশের নাগরিক৷ ওঁদের বাঁচাতে আমি নিজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আরজি জানাবো৷ এখন সংসদ চলছে, সংসদে আইন করে দেশ হারানো ৪০ লক্ষ মানুষকে সাহায্য করতে হবে৷’’ নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে রাজ্যের উপর প্রভাব পড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বলেন, ‘‘অসম থেকে লোক ঢুকলে রাজ্যের ক্ষতি হবে৷ কিন্তুু, সমস্যা হচ্ছে, ওঁরা এলে আমি তো আর কেন্দ্রের মতো তাড়িয়ে দিতে পারি না৷ রোহিঙ্গারাও রাজ্যে রয়েছে৷ অসমের বাসিন্দারা চাইলে তাঁরাও আসতে পারেন৷’’
[ নাম নেই নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়ায়, অসমে রাতারাতি উদ্বাস্তু ৪০ লক্ষ মানুষ ]
মুখ্যমন্ত্রী সুর চড়ানোর আগেই নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে বাদল অধিবেশনের শুরুতেই আজ মুলতুবি প্রস্তাব আনে তৃণমূল৷ অসমে বাঙালি উচ্ছেদের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়৷ আজ অধিবেশনের শুরুতেই অসমে ভিটেছাড়া হওয়া ৪০ লক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে রাজ্যসভায় হইচই শুরু করেন তৃণমূল সাংসদরা৷ অসমে বাঙালি উচ্ছেদের অভিযোগ তুলে সংসদ মুলতুবি প্রস্তাব আনে তৃণমূল৷ তৃণমূল সাংসদের তীব্র প্রতিবাদে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্ত নেন উপ-রাষ্ট্রপতি৷ পরে অধিবেশন শুরু হতে না হতেই ফের নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে সরব হন তৃণমূল সাংসদরা৷ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি জানান সাংসদরা৷
নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘‘নাগরিকপঞ্জির নামে কেন্দ্র সরকার ৪০ লক্ষ মানুষকে ভিটেছাড়া করেছে৷ ধর্ম ও ভাষার ভিত্তিতে নাগরিকত্ব থেকে বহু মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে৷ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত আমরা কোনওভাবেই মেনে নেব না৷ কেন্দ্রের এই ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আসামের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যের জনসংখ্যার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷ রাজ্যের অর্থনীতি ও সম্পদেও প্রভাব পড়বে৷ ফসে, অসমে ৪০ লক্ষ মানুষকে রাতারাতি ভিটেছাড়ানোর বন্দোবস্ত করায় প্রধানমন্ত্রীকে এই স্পষ্ট জবাব দিতেই হবে৷’’
অসমে নাগরিকপঞ্জির নামে বাঙালি উচ্ছেদের অভিযোগ আগেই তুলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই ঘটনায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও সুর চড়িয়েছিলেন তিনি৷ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, নাগরিকপঞ্জির নামে বাঙালি উচ্ছেদ হলে কোনওভাবেই মেনে নেবেন না তিনি৷২০১৯-এর নির্বাচনের আগে নাগরিকপঞ্জির জেরে দেশ হারানো ৪০ লক্ষ মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে দেশে কেন্দ্র বিরোধিতার তুফান তুলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কারণ, বাংলার অগ্নিকন্যা জানেন কীভাবে প্রতিবাদের আগুন জ্বালাতে হয়৷ কংগ্রেসের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া না এলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু বিরোদিতার ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু করে দিয়েছেন৷
The post নাগরিকপঞ্জির নামে চলছে ‘বাঙালি খেদাও’, অসম ইস্যুতে কেন্দ্রকে তোপ মমতার appeared first on Sangbad Pratidin.