অভিরূপ দাস: বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই শহরের ছেলে-মেয়েদের। বরং প্রবীণ সদস্যদের জন্য এখনও ভাবে মফস্বলের ছেলে-মেয়েরা। তারা অনেক বেশি সহানুভূতিশীল দাদু-ঠাকুরমাকে নিয়ে। সম্প্রতি হেল্প এজ ইন্ডিয়ার সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই চমকপ্রদ তথ্য।
দশটি শহরজুড়ে সমীক্ষা চালিয়েছে সংস্থা। তার মধ্যে রয়েছে কলকাতাও। ৫৭৯৮ জনের ওপরে চালানো এই সমীক্ষায় ৭০ শতাংশ তরুণ প্রজন্ম। বাকি ৩০ শতাংশ ষাটের বেশি বয়সি। হেল্প এজ ইন্ডিয়ার রাজ্য অধিকর্তা প্রিয়াঞ্জলি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, মেট্রো শহর আর মফস্বল, দুই জায়গাতেই সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, মফস্বলের যুবক-যুবতীরা প্রবীণদের প্রতি অনেক বেশি সংবেদনশীল।
কেন মেট্রো সিটিতে কমছে প্রবীণ-তরুণ আড্ডা? ৭৬ শতাংশ প্রবীণ-প্রবীণা জানিয়েছেন, এই প্রজন্ম ভীষণ ব্যস্ত। সবসময় দৌড়ে বেড়াচ্ছে। তাদের সময় কোথায়? পাশাপাশি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, জেনারেশন জেডের ৭২ শতাংশ মনে করেন, দাদু-ঠাকুরমারা এই প্রজন্মের মনের কথা বুঝতে পারেন না।
ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সৃজিত ঘোষ জানিয়েছেন, মফস্বলের ছেলে-মেয়েরা এখনও দাদু-ঠাকুরমার প্রতি সংবেদনশীল, এর মূল কারণ মফস্বলে এখনও টিকে রয়েছে যৌথ পরিবার। তাঁর কথায়, ‘‘মফস্বলে এখনও এক পাড়ায় পাশাপাশি থাকে কাকু-জেঠু,মাসি-মেসো। সম্পর্কগুলো টিকে রয়েছে। শহর কলকাতায় সেটা সচরাচর দেখা যায় না। এখানে চাকরি সূত্রে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে। নিউক্লিয়ার পরিবারের বাড়বাড়ন্ত এখানে। মেট্রো শহরে ছেলে-মেয়েরা দেখে এসেছে মা-বাবা যৌথ পরিবার ছেড়ে শহর কলকাতায় দু’কামরার ফ্ল্যাটে উঠেছে। মা-বাবার সঙ্গে তাদের গুরুজনদের অতটা যোগাযোগ নেই। পরবর্তীতে এই ছেলে-মেয়েরা যখন বড় হচ্ছে তারাও নিজেদের মা-বাবাকে সেভাবেই ট্রিট করে।’’
মেট্রো সিটিতে মুষ্টিমেয় পরিবারে দাদু-ঠাকুরমার সঙ্গে গল্প হলেও তা মূলত মুখোমুখি। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে প্রবীণরা মুখোমুখি কথা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ৮৮ শতাংশ প্রবীণ মুখোমুখি কথা বলতে পছন্দ করেন। মাত্র ২৮ শতাংশ ভিডিও কলে কথা বলেন। ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে কথা বলেন মাত্র ১৪ শতাংশ প্রবীণ। কেন এমন অবস্থা? দেখা গিয়েছে, ৭১ শতাংশ প্রবীণ বেসিক মোবাইল ফোনেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। শহরের মাত্র ৪১ শতাংশ প্রবীণ স্মার্টফোনে সড়গড়।
