অর্ণব আইচ ও নিরুফা খাতুন: ঘরের ভিতর পড়ে মেয়ের মোবাইল। কিন্তু মেয়ে কোথাও নেই। সন্দেহ হয় মায়ের। প্রতিবেশী ও অন্য পরিজনদের ডেকে খোঁজাখুঁজি শুরু করতেই খাটের তলা থেকে রক্ত চুঁইয়ে বেরতে দেখেন মা ও অন্য বোনেরা। খাটের তলায় টর্চ জ্বালাতেই দেখা যায় পড়ে আছে যুবতী নাফিসা খাতুনের ক্ষতবিক্ষত দেহ। পুলিশের সন্দেহ, নৃশংসভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই যুবতীর গলা কেটে খুন করা হয়েছে। এছাড়াও শরীরে রয়েছে বেশ কিছু ক্ষতচিহ্ন। খুনি যুবতীর দেহ খাটের তলায় সরিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। এই খুনের পিছনে নাফিসার কোনও বিশেষ পরিচিত অথবা ‘বন্ধু’ রয়েছে বলে ধারণা পুলিশের।
বুধবার এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার গল্ফগ্রিন এলাকায়। ওই এলাকার রাজেন্দ্রপ্রসাদ কলোনি এলাকায় থাকতেন মা ও মেয়ে। নাফিসার মায়ের বাড়ির কাছেই একটি চায়ের দোকান রয়েছে। নাফিসা কাজ করতেন প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের নামী শপিং মলের একটি দোকানে। এদিন সকালে নাফিসার মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। নাফিসাও জানিয়েছিলেন, তিনি দোকানে যাচ্ছেন। সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে আসার পর যখন ঘরের ভিতর মেয়ের মোবাইল দেখতে পান, তিনি একটু অবাকই হন। কিন্তু মেয়ের হদিশ তিনি পাননি।
প্রথমে ওই শপিং মলের দোকানটিতে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন যে, নাফিসা এদিন দোকানে যাননি। এর পরই তিনি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে মেয়ের খোঁজখবর নেন। কেউ মেয়ের হদিশ দিতে পারেননি। তখন তিনি খবর দেন তাঁর অন্য দুই মেয়েকে। দুই মেয়ে ও দুই জামাই কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে চলে আসেন। এর মধ্যেই তাঁরা দেখতে পান যে, খাটের তলা থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তাঁরা টর্চ জ্বালাতেই দেখতে পান, খাটের তলায় একটু ভিতরের দিকেই পড়ে রয়েছে নাফিসার রক্তাক্ত দেহ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন গল্ফগ্রিন থানার পুলিশ, লালবাজারের গোয়েন্দা আধিকারিকরা। প্রাথমিকভাবে তাঁরাই বুঝতে পারেন যে, যুবতীর মুখ, গলা, বুকে রয়েছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন। রক্ত ভরে রয়েছে মুখেও। বেশি রাতে দেহটি পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ কুকুরও। তদন্ত শুরু করে পুলিশের নজর যুবতীর মোবাইলে। তিনি যাদের সঙ্গে বেশি কথা বলতেন, তাঁদের হদিশ করে গল্ফগ্রিন থানায় ডেকে জেরা করা শুরু হচ্ছে।
পুলিশের সন্দেহ, এই খুনের পিছনে রয়েছে সম্পর্কের টানাপোড়েন অথবা শোধ তোলার স্পৃহা। পুলিশের মতে, খুনি নাফিসার এতটাই পরিচিত ছিল যে, তিনি তাকে মা বেরিয়ে যাওয়ার পর আসতে বলেন। দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতারও সম্ভাবনা রয়েছে। কোনও বচসার পর নাফিসাকে খুন করা হয়, এমনও সম্ভব। আবার এই খুনটি পরিকল্পিত কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিবেশীরা কোনও আওয়াজ পেয়েছিলেন বা কাউকে আসতে দেখেছিলেন কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।