অর্ণব আইচ: প্রেমিকার বাবার ভয়ে ছাদের এক কোণে। আক্ষরিক অর্থে ছাদেই প্রথমে কোণঠাসা করা হয় হরিদেবপুরের অয়ন মণ্ডলকে। এরপর ওই যুবককে টেনে নিয়ে আসা হয় নির্মীয়মাণ দোতলায়। পরিকল্পনা করে সেখানেই খুন করা হয় অয়নকে।
দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুরে (Haridevpur) যুবক খুনের ঘটনায় পরতে পরতে রহস্য। ছাদ থেকে নেমে পালাতে চাইলেও পালাতে পারেননি নিহত অয়ন। একাধিকবার বন্ধু রাজু প্রামাণিকের সঙ্গে কথা হয় মোবাইলে। বন্ধু অয়নকে বাঁচাতে রাজু পাড়ার ছেলেদের নিয়ে প্রেমিকার বাড়িতে রাতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের ও পরিবারের সম্মানরক্ষার জন্য কোনও গোলমাল চাননি অয়ন। তাই বন্ধুদের আসতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু অয়নের কথা না শুনে রাতে বন্ধুরা মিলে জানা পরিবারের বাড়িতে গেলে হয়তো প্রাণে বাঁচতেন অয়ন, এখন আক্ষেপ করছেন বন্ধুরা। কারণ, অয়নকে যে রাত তিনটের পর খুন করা হয়, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত বন্ধু ও পুলিশও।
[আরও পড়ুন: ‘চাকরি চাই’, পোস্টার হাতে ধরনা মঞ্চে মাংস বিক্রেতা BJP কর্মী! ছবি ভাইরাল হতেই বিতর্ক]
রবিবার অয়নের বন্ধু রাজু প্রামাণিক জানান, রাত ন’টার পর তিনিই বন্ধু অয়নকে প্রেমিকার বাড়িতে ছাড়তে যান। প্রথমে জানা যায় যে, অয়নের প্রেমিকার মা রুমা জানা ডেকে পাঠায় তাঁকে। তখন বাড়িতে রুমা ও অয়ন ছাড়া কেউ ছিল না। কিন্তু প্রেমিকার ও তার ভাই তখন বাড়িতেই ছিল বলে বন্ধুদের ধারণা। যদিও পুলিশের দাবি, রুমা বাড়িতে একাই ছিলেন। পরে প্রেমিকা ও তার নাবালক ভাই আসে। রাজুর দাবি, তাঁকে অয়ন বলেছিলেন বাইরে থাকতে। রাতে প্রেমিকার বাবা বাড়িতে ফিরলেই ফোন করে জানাতে। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ রাজু প্রেমিকার বাবা দীপক জানাকে বাড়ির দিকে যেতে দেখেন। কিন্তু এলাকায় ‘প্রভাবশালী মুহুরি’ বলে পরিচিত দীপক জানা বাড়িতে ঢোকার পর আর বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি অয়ন। তিনি রাজুকে ফোন করে বলেন, তাঁর পক্ষে এখন বের হওয়া অসম্ভব। তিনি ছাদে গিয়ে লুকোচ্ছেন। রাত দু’টো নাগাদ তিনি বের হবেন।
রাজু জানান, তিনি পাড়ায় গিয়ে বসছেন। অয়নের জন্য অপেক্ষা করবেন। এর পরও ছাদে বসে অয়ন মোবাইলে রাজুর সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেন। রাত দেড়টা নাগাদ অয়নের কণ্ঠস্বর শুনে সন্দেহ হয় রাজুর। অয়ন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, প্রেমিকার মা তাঁর বুকে প্রচণ্ড জোরে ঘুসি মেরেছে। তাঁর বুকে ব্যথা করছে, মাথা ঘুরছে। তখনই রাজু বলেন, পাড়া থেকে বন্ধুরা গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করতে যাচ্ছেন। কিন্তু তাতে নারাজ হন অয়ন। রাজুর দাবি, অয়ন তাঁকে বলেন, ‘‘তোদের পায়ে ধরছি তোরা আসিস না। প্রেমিকার বাবা বাড়িতেই আছে। বুকের ব্যথা কমলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব।’’ কিছুক্ষণ পর রাজু ফের ফোন করলে অয়ন জানান, তাঁর বুকের ব্যথা কমেছে। তখন তিনি ছাদে লুকিয়ে রয়েছেন। সম্ভবত তারপরই খুন করে দেহ মগরাহাটে ফেলে রেখে আসেন প্রেমিকার পরিবারের লোকজন।