শাহাজাদ হোসেন, ফরাক্কা: ডাকাতদের হাতে শুরু হয়েছিল পুজো। আজও মুসলিম পরিবারে তৈরি ভোগই প্রথম উৎসর্গ করা হয় দেবীকে। নেই আরতি ও পুষ্পাঞ্জলীর রীতি। এবছর ৩৬১ বছরে পড়ল রঘুনাথগঞ্জের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজো (Durga Puja 2022)। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির প্রতীক এই পুজো।
মুসলিম পরিবারে তৈরি ভোগ উৎসর্গ করার পর দেবীকে দেওয়া হয় অন্যদের তৈরি ভোগ। এর পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস। আছে প্রাচীন লোককথা। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল সাগরদিঘি ব্লকের মণিগ্রাম। বিশেষ কারণে বহুকাল পূর্বে বন্দোপাধ্যায় পরিবার সাগরদিঘি ছেড়ে চলে আসেন রঘুনাথগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের জোতকমল গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মী জনার্দনপুর বহুরা গ্রামে। সেই সময় মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) রঘুনাথগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছিল বন-জঙ্গলে ঘেরা। জঙ্গলে বসবাস ছিল ডাকাতদের। জঙ্গলের ভিতরে দুর্গাপুজো করত ডাকাতরা। জানা গিয়েছে, একদিন জোতকমলের জমিদার শরৎচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় জমিদারি কাজ সেরে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন তিনি ডাকাতদের পূজিত দেবী দুর্গার মূর্তি দেখতে পান।
[আরও পড়ুন: ‘মদন মন্ত্রিসভায় নেই দেখে অবাক হচ্ছি’, মমতার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সাংসদ প্রসূন]
কথিত আছে, সেই রাতে শরৎচন্দ্রকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী দুর্গা। দেবীর স্বপ্নাদেশে ডাকাতদের পূজিত দেবী দুর্গার মূর্তি নিয়ে আসা হয় বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে। সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু হয়। পুজোতে কোনওরকম ফাঁকফোকর না থাকলেও দেবী পুজোয় সন্তুষ্ট ছিলেন না। পুনরায় দেবী স্বপ্নাদেশ দেন। জানান, পুজোর প্রথম ভোগ কোন মুসলিম পরিবারকে দিতে হবে। সেই সময় বহুরা গ্রামে বাস করতেন মাত্র একজন মুসলিম মহিলা। তিনি লোকার মা নামে সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন। লোকার মাকে পুজো দেওয়ার কথা বললে তিনি রাজি হননি। বলেন, নিজের পেটে ভাত জোটে না সে আবার পুজো দেবে কোথা থেকে? পরে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে লোকার মা পুজো দিতে রাজি হন।
ওই মহিলা জঙ্গল থেকে কোদার চাল কুড়িয়ে এনে নাড়ু তৈরি করে দেবীর পুজো দেন। সেই রীতি মেনে প্রতিবছর কোনও মুসলিম পরিবারের দেওয়া ভোগ প্রথমে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। তারপর অন্যরা ভোগ দেন। কোদার চাল থেকেই এই পুজো ‘কোদা খাকি দুর্গা’ নামে পরিচিত। ডাকাতদের প্রচলিত পুজো মেনে এই পুজোতে আরতি ও পুষ্পাঞ্জলী নেই। যদিও পাঠাবলি আজও হয়। আজও দেবীর ভোগে অন্যতম খোদার ভোগ থাকে। প্রতিবছর বাংলাদেশ কলকাতা বা বর্ধমান থেকে কেউ-না-কেউ কোদার চাল পাঠিয়ে দেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। এই পুজোটা শুরু করেছিল ডাকাতরা। পুজোয় চারটে পাঠা বলি দেওয়া হয়। একচালার মূর্তি। পুজোর কটা দিন সব সম্প্রদায়ের মানুষ মেতে ওঠেন খোদা খাকি দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে।