গৌতম ব্রহ্ম: কোথাও গুণে শেষ করা যাচ্ছে না। কোথাও বা হাতে গোনা দু’চার জন। শত সহস্র অ্যালোপ্যাথিক আর জনা পাঁচেক আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। দুই শাখার ডাক্তারবাবুদের জন্য কোভিড (COVID-19) আক্রান্তের দাঁড়িপাল্লা এমনই ভারসাম্যহীন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে যেখানে শয়ে শয়ে চিকিৎসক আক্রান্ত। সেখানে এপিসি রোডের শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠ কিংবা ডি এন দে হোমিওপ্যাথি কলেজে সব মিলিয়ে আক্রান্ত জনা পনেরো। আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি কলেজের চিকিৎসকরা কি তাহলে করোনা (Coronavirus) টেস্ট করাচ্ছেন কম? ডি এন দে হোমিওপ্যাথি কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শ্যামল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিয়মিত টেস্ট করাচ্ছেন হাসপাতালের সকল চিকিৎসক। কিন্তু পজিটিভ হচ্ছেন গুটিকয়েক।
একই খবর আয়ুর্বেদ (Ayurveda) চিকিৎসকদেরও। তাঁদের নেগেটিভ থাকার নেপথ্যে ওমিক্রনের চরিত্র। ডেল্টার মতো ফুসফুসে নয়, নয়া ওমিক্রনের ‘টার্গেট’ গলা। বেশিরভাগ আক্রান্তেরই তাই গলা খুসখুস, নাক দিয়ে জল পড়ছে। গা-হাত-পা ম্যাজম্যাজ। সাধারণ ঠান্ডা লাগার এই উপসর্গকে কোন জাদুতে ঠেকাচ্ছেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা?
ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট আয়ুর্বেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠ-এর অধ্যাপক চিকিৎসক প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র জানিয়েছেন, আহার, বিহার আর আচার – তিনটি মন্ত্রেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা ঢাল তৈরি করেছেন। আহার অর্থাৎ খাদ্য। ডা. মহাপাত্রের বক্তব্য, পায়েস, ক্ষীর, নারকেল, বাদাম, ঘি-র মতো খাদ্য অভিষ্যন্দজনক। এই ধরনের খাবার শ্লেষ্মা বাড়িয়ে দেয়। লক্ষ করা যাচ্ছে, ওমিক্রন স্ট্রেনের আক্রমণে বুক ঘড়ঘড় করছে কফে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা এই ধরনের খাবার বাদ দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: মুখে শুধু কাপড়ের মাস্ক? ওমিক্রন হতে পারে ২০ মিনিটেই! দাবি বিশেষজ্ঞদের]
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সতেজ রাখতে জীবনযাপন পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডা. প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র জানিয়েছেন, এহেন পদ্ধতিকে একত্রে বলে সৎ বৃত্ত। যার মধ্যে অন্যতম অতিরিক্ত মশলাদার খাবার না খাওয়া, কড়া পাক খাবার বাদ দেওয়া। ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নান, নিয়মিত তেল মাখা। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের দাবি, এই সমস্ত প্রাত্যহিক কাজের মাধ্যমে শরীরকে ভিতর থেকে শক্তিশালী রেখেছেন তাঁরা।
জে বি রায় আয়ুর্বেদ কলেজের অধ্যাপক ডা. শ্রীকান্ত পণ্ডিত জানিয়েছেন, বহুদিন থেকেই নিয়মিত অশ্বগন্ধা, গুলঞ্চ, হলুদ দুধ, সংশমনী বটি খাচ্ছেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা। সাধারণ সর্দি কাশি থেকে তাঁরা বরাবরই সুরক্ষিত। যেহেতু ওমিক্রনের উপসর্গও তেমনই। তাই তা আঁচড় কাটতে পারছে না আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের শরীরে। ডা. শ্রীকান্ত পণ্ডিত জানিয়েছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুলঞ্চ বা গুরুচির জুড়ি মেলা ভার। দু’ভাবে এই রস পান করা যেতে পারে। এক, গুলঞ্চের কাণ্ড থেঁতো করে, রস করে সেই রস ১০ এমএল করে দিনে দু’বার পান করা যেতে পারে। দুই, গুলঞ্চের শুকনো কাণ্ড উষ্ণ জলে ফুটিয়ে সেই রস ২০ মিলিলিটার করে দু’বার পান করা যায়। অন্যদিকে, সংশমনী বটি দুটো করে ঈষদুষ্ণ জলে দিয়ে দু’বার পান করলেও মিলবে উপকার। বহুদিন আগেই করোনা মোকাবিলায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুলঞ্চ খাওয়ার নিদান দিয়েছে কেন্দ্রের আয়ুষ মন্ত্রক।
[আরও পড়ুন: কোভ্যাক্সিন নেওয়ার পর প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত? জেনে নিন কী জানাল ভারত বায়োটেক]
আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরাও বলছেন, শরীরকে শুদ্ধ করতে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুলঞ্চ খুবই উপকারী। আয়ুর্বেদ চিকিৎসক সুমিত সুর জানিয়েছেন, গুলঞ্চের ইমিউনিটি মডিউলেটর অ্যাকশন রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শুধু গুলঞ্চই নয়, যষ্টিমধু, আদা গুঁড়ো এগুলির সবক’টিরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। যা নিয়মিত খেয়েই ভাইরাসের বিরুদ্ধে বর্ম তুলেছেন চিকিৎসকরা। ডি এন দে হোমিওপ্যাথি কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শ্যামল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রোগ নয়, উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ দেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা। করোনার সাধারণ উপসর্গে এপিটি প্রোটোকল অত্যন্ত কার্যকর। আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০, ফসফরাস ৩০, টিউবারকুলিনাম ২০০ তেই শরীর ভিতর থেকে মজবুত হচ্ছে।