রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই আসল। তা না থাকলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও হতে পারে নিউমোনিয়া । তাহলে কীভাবে সতর্ক হবেন? ১২ নভেম্বর বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবসে পরামর্শ দিলেন আইএলএস হাসপাতালের বিশিষ্ট পালমোনোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ অনির্বাণ সরকার।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই আসল। তা না থাকলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া। নিউমোনিয়ায় (Pneumonia) আক্রান্ত হতে পারেন আপনি। যদিও দীর্ঘদিন যাবৎ নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন রয়েছে বাজারে। তবে কোভিড মহামারীর পরে এই বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। বলে রাখা ভালো, সময় মতো নিউমোনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, পরবর্তীকালে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এমনকী ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও জীবনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে নিউমোনিয়া। কারণ যে ধরনের ভাইরাস থেকে এই রোগ হয়, তার সবকটিকে রুখতে সক্ষম নয় ভ্যাকসিন। সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জীবনদায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলি। যদিও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় চিকিৎসকদের।
আমাদের দেশে নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বেড়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অতি ব্যবহার কিংবা অপর্যাপ্ত ডোজের অভ্যাস সাময়িক স্বস্তি দিলেও শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এই অভ্যাস সম্পূর্ণরূপে জীবাণু নির্মূল করতেও ব্যর্থ হয়। অতি ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে। এক সময় ওষুধ ঠিক মতো কাজ করে না। উল্লেখ্য, ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণের ফলেও নিউমোনিয়া হতে পারে। রোগ গুরুতর হয়ে উঠলে ভেন্টিলেশনের মতো লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে রোগীর।
[আরও পড়ুন: কেউ পার্টিতে মশগুল, কারও পছন্দ ঘরোয়া আড্ডা, উৎসবে মাতলেন তারকারা]
শীতের শুরুতে সর্দি-কাশি বাড়ে। বেড়ে যায় নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যাও। বেশি আক্রন্ত হন শিশু ও প্রবীণরা। ‘স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া’, ‘হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা’, ‘মোরাক্সেলা ক্যাটারহালিস’ এবং ‘ক্লেবসিয়েলা’-সহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এই সংক্রমণের জন্য দায়ী। নিউমোনিয়ার উপস্বর্গ হল কাশি ও কফের পাশাপাশি জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা। বয়স্কদের মধ্যে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়াকে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক বলে মনে হতে পারে। সিটি স্ক্যানে তা ধরা না পড়লে নিউমোনিয়া হতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, যেমন ডায়াবেটিস, সিওপিডি, উচ্চ রক্তচাপ, এডস বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
[আরও পড়ুন: দীপাবলিতে নবাব যেন বাঙালিবাবু! ধুতি-পাঞ্জাবিতে সইফকে সাজালেন কলকাতার ডিজাইনার]
নিউমোনিয়া প্রতিরোধে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন, শীতের সময় টুপি, মাফলার বা স্কার্ফ ব্যবহার করা। খেয়াল রাখা মাথায় ঠান্ডা যাতে না লাগে। ঠান্ডা জলে স্নান করা থেকে বিরত থাকলেও নিউমোনিয়া ঝুঁকি কিছুটা কমে। অ্যান্টিবায়োটিক হল নিউমোনিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা। অ্যান্টিবায়োটিক নির্ধারণ করা হয় সংক্রমণটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাল নাকি ছত্রাকজনিত, তার উপরে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে পেনিসিলিন বা অনুরূপ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। ছত্রাকের সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করেন চিকিৎসকরা। তবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিরীক্ষণ করেই চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা যুক্তিযুক্ত। পাশাপাশি রোগীর শরীরে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স শনাক্ত করা এবং তা মোকাবেলা করাও অপরিহার্য।