সৈকত মাইতি, তমলুক: ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে আধার নম্বর। মোদির ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে প্রায় সমস্ত তথ্যই নাকি পাচার হয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীদের কাছে! আর তাতেই গ্রাম থেকে শহর একের পর এক সাইবার হানায় কার্যত সর্বশান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই তালিকায় বাদ গেল না পূর্ব মেদিনীপুরও। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে জেলার পুলিশ কর্মী। কোনওরকম ওটিপি শেয়ার কিংবা প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা না দিয়েও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা! স্বাভাবিক কারণেই এমন চাঞ্চল্যকর একের পর এক ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন।
মোবাইলের সিম কার্ড, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে রেশন দোকান কিংবা জমি-বাড়ি ক্রয়-বিক্রয়। সব ক্ষেত্রেই উপভোক্তাদের আঙুলের ছাপ অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে। অন্যদিকে আবার গ্রাহকদের সুবিধার্থে খুব সহজেই আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আধার কার্ড এবং বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের সহায়তায় সরকারি উদ্যোগে চালু হয়েছে ডিজিটাল সিস্টেম। এমতাবস্থায় রাজ্যের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে এইপিএস (AEPS) মারফত ব্যাংক অ্য়াকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে।
[আরও পড়ুন: যাদবপুর কাণ্ড: গলায় পা তুলে দেওয়া উচিত! আদালতে ঢুকতেই অভিযুক্তকে চড় মহিলা আইনজীবীর]
সম্প্রতি তমলুক শহরের আবাসবাড়ি চর এলাকার রিন্টু দে নামে এক যুবকের সেলারি অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, এর আগেও কাঁথির এক পুলিশের পদস্থ অফিসারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকেও প্রায় ইন্দ্র জলের মতোই বেশ কয়েক হাজার টাকা গায়েব হয়ে যায়। আর এমন অভিযোগ এখন ভুরিভুরি। ঘটনার তদন্তে নেমে সামনে এসেছে দুষ্কৃতীদের অভিনব কায়দায় এই এইপিএস মারফত টাকা গায়েব করে দেওয়ার কেরামতি!
কিন্তু কী এই এইপিএস? আধার এনেবল পেমেন্ট সিস্টেম। জেলা সাইবার আধিকারিকদের দাবি, এই মাধ্যমে খুব সহজেই কেবলমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডেভেলপের মাধ্যমে আধার কার্ডের সহযোগিতায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া যায়। তবে একসঙ্গে এই টাকা তুলে নেওয়ার পরিমাণটা কম হলেও এমন ঘটনা এখন আখছার ঘটছে। আর তাতেই চিন্তায় সাইবার পুলিশ আধিকারিকরা। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে জমি-বাড়ির কেনাবেচা কিংবা যে কোনও রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে গোপন এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট-সহ আধার নম্বর প্রতারকদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে? তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, হাতের আঙুলের ছাপকে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে খুব সহজেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাই অবিলম্বে এম আধার অ্যাপসের ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে নানাবিধ সতর্কবার্তা দিয়েছেন পুলিশ আধিকারিকরা। সেই সঙ্গে এই অভিনব কায়দায় জেলাজুড়ে ঠিক কত পরিমাণ টাকা গায়েব হয়েছে সে বিষয়েও নির্দিষ্ট তথ্য অনুসন্ধানে নেমেছেন পুলিশকর্মীরা। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে।