স্টাফ রিপোর্টার: জ্বর-সর্দি-কাশির জাল ক্রমশ ছড়াচ্ছে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। জ্বর-তীব্র শ্বাসকষ্ট। সঙ্গে বেদম কাশি। কারও আবার প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তও। গবেষকরা বলছেন, ভাইরাল ফিভার। তবে করোনার (Coronavirus) মতো দ্রুত সংক্রামক হলেও মারণ ক্ষমতা কম। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। একমাত্র টোটকা প্যারাসিটামল (Paracetamol) জাতীয় ওষুধ ও প্রচুর জল খেতে হবে।
করোনা কমতেই দেশের বেশিরভাগ রাজ্যে এহেন ভাইরাল ফিভারের দাপট দেখে আলোচনায় বসে দেশের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সংস্থা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। পুণের ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিস্টদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে আইসিএমআর। দুই সংস্থার একটাই বক্তব্য, মরশুমি জ্বর, ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। তাহলে যে এত বাচ্চা হাসপাতালে ভরতি হচ্ছে? অথবা ভেন্টিলেশনে যেতে হচ্ছে? আইসিএমআর(ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ)-এর বিশিষ্ট গবেষক সমীরণ পণ্ডা বলেন,‘‘করোনা ভাইরাস শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়েছে। তাই সামান্য জ্বর-সর্দিতেই কাহিল হচ্ছে অনেকেই। কিন্তু তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হচ্ছে। আবার অনেকে তো বুঝতেই পারছে না। সামান্য জ্বরের পরই সুস্থ।’’ তাহলে কী করণীয়?
[আরও পড়ুন: সামান্য জ্বর-সর্দিতেই মুড়ি-মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক নয়, সতর্ক করল কেন্দ্র]
সমীরণবাবুর কথায়,‘‘প্রস্রাবের পরিমাণ যাতে না কমে তার জন্য বারবার জল খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক একদমই খাওয়া উচিত নয়।’’ ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের অধ্যক্ষ ডা. জয়দেব রায়ের কথায়, ‘‘ছ’মাস বা তার কম বয়সের শিশুর জ্বর-সর্দি হলে মাতৃদুগ্ধই ওষুধের কাজ করে। তবে শ্বাসকষ্ট বেশি হলে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চার ফুসফুসে যাতে চাপ না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। সমীরণ ও জয়দেববাবুর কথায়,‘‘বাচ্চার শরীর খারাপ হলে আগে মা বুঝতে পারেন। স্তন্যপান করতে অনীহা। বা কণ্ঠ ইংরেজি ‘ভি’-এর মতো বেরিয়ে এলে শিশুর সংক্রমণ হয়েছে বুঝতে হবে। আবার প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, চোখ লাল বা কনজাংটিভাইটিস বা পেট খারাপ হলেও বুঝতে হবে অ্যাডিনো বা সমগোত্রীয় ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে।
তবে ভরসার কথা, ডিএনএ ভাইরাসের মারণক্ষমতা কম। মিউটেশনও হয় না বললেই চলে। তাই অসুস্থ হলে বাচ্চা ও মাকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। পালস অক্সিমিটারে রক্তে অক্সিজেন কম দেখালে দ্রুত হাসপাতালে ভরতি করতে হবে। তবে আউটডোরে রোগীর ভিড় কমলেও জন্মগত ত্রুটি-অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চাদের মধ্যে বেশ কয়েকটির মৃত্যু হয়েছে। রবিবার বি সি রায় শিশু হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিক বন্ধ থাকায় রোগীর পরিজনদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। তবে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানান, স্বাস্থ্য দপ্তরের ওই নির্দেশের উদ্দেশ্য ছিল সব হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিক খোলা রাখার।
বি সি রায় হাসপাতালে জরুরি বিভাগে সবসময় বিশেষজ্ঞ থাকেন। তাই কোনও সমস্যা হয়নি। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বি সি রায় শিশু হাসপাতালে সাতটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দেগঙ্গার বাসিন্দা আড়াই বছরের একটি শিশুর মৃত্যু রয়েছে। অভিযোগ, শনিবার তাকে পিকু-তে পাঠানোর দরকার ছিল। কিন্তু পিকু খালি না থাকায় এদিন বেলার দিকে তার মৃত্যু হয়। শিশুটি অ্যাডিনো সংক্রমিত ছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তবে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের কথায়, আবহাওয়া যত গরম হবে, ততই ভাইরাসের ধার কমবে।