রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: এবার পুজোয় গোয়ার মতো দিঘার সমুদ্রেও নামতে চলেছে সুসজ্জিত প্রমোদতরী। পুজোর আগে পর্যটকদের কাছে একটি নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিকেরা। ইতিমধ্যে প্রমোদতরী প্রস্তুতির চূড়ান্ত কাজ চলছে। এতদিন পর্যটকরা সৈকত থেকেই সমুদ্রের রূপ উপভোগ করেছেন। এবার প্রমোদতরীতে চেপে সমুদ্রযাত্রার আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন বলে জানা গিয়েছে।
সমুদ্রের তীর বরাবর চলেছে দিঘা থেকে শৌলা পর্যন্ত দীর্ঘ ২৯ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ। মাঝখানে রয়েছে ঝাউবন। সব মিলিয়ে এক অপূর্ব এবং মনোরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে ভেসে চলবেন পর্যটকরা। ইতিপূর্বে কলকাতায় গঙ্গাবক্ষে প্রমোদতরী নামতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে সমুদ্রবক্ষে প্রমোদতরী এই প্রথম। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে পুজোর মরশুমে সমুদ্রবক্ষে প্রমোদতরীতে ভ্রমণের স্বাদ উপভোগের সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে রাজ্য ভূতল পরিবহণ নিগমের তরফ থেকে ‘এমভি নিবেদিতা’ নামে ওই ভেসেলটি হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ কে দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, সেই ভেসেল নদীর মোহনায় ঘুরবে। ভেসেল অর্থাৎ প্রমোদতরীতে পর্যটকদের মনোরঞ্জন ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। তা থেকে আয়ও হবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সহ অন্যান্য কারণে সেই উদ্যোগ শুরু হতে দেরি হয়। ফলে জলযানটি দীর্ঘদিন ধরে পড়েছিল। এদিকে প্রমোদতরী কাজ শুরু না করার তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে লক্ষাধিক টাকা খরচ হচ্ছিল বলে খবর। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের ভেসেলটি দিঘা শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদকে দিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাব অনুমোদনের পর ভেসেলটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: নিয়ম বহির্ভূতভাবে হস্টেলে ছিলেন স্বপ্নদীপ! বিস্ফোরক দাবি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের]
জানা গিয়েছে, ওই জলযানটি দিঘার অদূরে শংকরপুরের ন্যায়কালী মন্দির সংলগ্ন সমুদ্র থেকে ছাড়বে। দিঘা, শংকরপুর, মন্দারমণির পাশাপাশি খাঁড়ি এলাকাগুলিতেও ভ্রমণ করবে জলযানটি। অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত এই জলযানে রেস্তরাঁর পাশাপাশি থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। আবার সন্ধের সময় আলোকজ্জ্বল পরিবেশে নাচগানের ব্যবস্থাও থাকবে। সেখানে বাউল-সহ বিভিন্ন লোকসংগীত এবং আধুনিক গান পরিবেশিত হবে। পর্যটকরা সমুদ্রের শোভা দেখতে দেখতে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। যাত্রাপথে সমুদ্রতীরবর্তী মৎস্যজীবীদের গ্রাম এবং তাঁদের কর্মকাণ্ড দেখার সুযোগ রয়েছে। যাত্রা শেষে ফের ন্যায়কালী মন্দির সংলগ্ন এলাকায় ফিরে আসবে প্রমোদতরীটি।
প্রয়োজনে ছোটখাট অনুষ্ঠান, পার্টি প্রভৃতির জন্য ভাড়া করা যাবে এমভি নিবেদিতা। এই প্রমোদতরী চালিয়ে যা আয় হবে, তার একটি অংশ পাবে হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থা এবং আর একটি অংশ পাবে দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদ বলে জানা গিয়েছে। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর বলেন, “পরিবহণ দপ্তর হলদিয়াতে একটি ভেসেল দিয়েছিল। তার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে জেলা শাসক ওই ভেসেলটি দিঘা উন্নয়ন পর্ষদকে দিয়েছে।” দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানসকুমার মণ্ডল বলেন, “পুজোর ঠিক আগে যাতে প্রমোদতরীটি চালু করে দেওয়া যায় তার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, এই পরিকল্পনা সফল হবে।”