সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রায় ১০ লক্ষ আয় ছুঁয়ে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে চোখ টানছে দুয়ারসিনি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র। সেই সঙ্গে এই পর্যটন প্রকল্প দেখভাল করে লাভের মুখ দেখছে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের আসনপানি যৌথ বন পরিচালন কমিটি। সব মিলিয়ে এই প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র-ই ওই কমিটিকে স্বনির্ভর করে তুলেছে। তাই বাংলার একেবারে শেষ ঠিকানা বান্দোয়ানের দুয়ারসিনি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্রকে ঘিরে আরও কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়েছে বনদপ্তর।
পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বন বিভাগের বান্দোয়ান দুই বনাঞ্চলের মধ্যে রয়েছে এই প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র। কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে বনদপ্তরের স্টেট ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে এই কেন্দ্র চলছে। ২০২১-২২ আর্থিক বছরে এই কেন্দ্র থেকে বনদপ্তর আয় করেছে ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ২০০ টাকা। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে আয় হয়েছে ৯ লক্ষ ৮০ হাজার ৭২০ টাকা। যেহেতু এই কেন্দ্র যৌথ বন পরিচালন কমিটি দেখভাল করছে তাই বিধি অনুযায়ী আয়ের ২৫ শতাংশ টাকা তারা পাচ্ছেন। ওই নিরিখে ২০২১-২২ আর্থিক বছরে ওই কমিটি হাতে পেয়েছে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৫০০ টাকা। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে তাদের হাতে এসেছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দুয়ারসিনি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র থেকে আয় বাড়ছে। লাভের মুখ দেখছে ওই কেন্দ্র চালানো আসনপানি যৌথ বন পরিচালন কমিটি। ওই পর্যটন প্রকল্প থেকে তারা স্বনির্ভর হয়েছেন। ওই ভ্রমণ কেন্দ্রকে ঘিরে আমরা আরও কয়েকটি পরিকল্পনা নিচ্ছি।” ওই যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্য মকর বেসরা, মনীশ দেব টুডু জানান, ” এখন এই কেন্দ্র প্রতিদিনই জমজমাট, ফলে আয় বাড়ছে।”
[আরও পড়ুন: উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে পুলিশ ও স্থানীয়দের ধস্তাধস্তি, রণক্ষেত্র মন্দারমণি]
ওই ভ্রমণ কেন্দ্রের কটেজের পিছনেই রয়েছে একটি পাহাড়। সেই পাহাড়ে পর্যটকদের নিয়ে যেতে পুজোর আগেই যাতে ট্রেকিং রুট খোলা যায় সেই চেষ্টা করছে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ। ডিএফও বলেন, “কটেজ থেকে ওই পাহাড়ের দূরত্ব কম বেশি ৩ কিলোমিটার। সেই পাহাড়ে পর্যটকদের নিয়ে যেতে ট্রেকিং রুট আমরা চালু করছি। ওখানে বসার জায়গা থাকবে।” এছাড়া ওই ক্যাম্পাসে দুটো টেন্ট বসানোরও পরিকল্পনা নিয়েছে বনদপ্তর। বর্তমানে এই পর্যটন প্রকল্পে তিনটি কটেজ রয়েছে। রয়েছে দুটো ডরমেটরি। অফবিট টুরিজম হিসাবেই দুয়ারসিনিকে তুলে ধরেছে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ। কটেজের ভাড়া ২ হাজার ২৪০ টাকা। ডরমেটরি মাত্র ২০০ টাকা।
ঘন জঙ্গলের মধ্যে সেখানকার মাটির ছোঁয়াতেই তৈরি হয়েছে এই কটেজ। কটেজের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে সাতগুড়ুম নদী। এই জঙ্গলে রয়েছে শাল, পিয়াল, মহুয়া, বহড়া, কুসুমের মত বৃক্ষরাশি। মাঝেমধ্যে নানা পাখির ডাক আর জঙ্গলের নির্জনতায় যেন হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা এই দুয়ারসিনি। কপাল ভাল থাকলে বুনো হাতি ছাড়াও চিতল হরিণ, বুনো শুয়োর, গন্ধগোকুল, ডোরাকাটা হায়না, এমনকী নেকড়ের মুখোমুখিও হয়ে যেতে পারে পর্যটকের দল। তাই জঙ্গলে ট্রেকিং করার সময় অ্যাডভেঞ্চার টুরিজমে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে।
[আরও পড়ুন: স্মার্টফোনেই কেল্লাফতে! এবার QR কোড স্ক্যান করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে দেখাতে পারবেন ডাক্তার]
এই পর্যটন প্রকল্পের মধ্য দিয়েই বাংলা-ঝাড়খন্ড টুরিজম সার্কিট যুক্ত হয়েছে। দুয়ারসিনি থেকে প্রায় ২০ কিমির মধ্যেই ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার গালুডি ও ঘাটশিলা। এই কেন্দ্রে পা রাখলে অনায়াসে বেড়ানো যাবে ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড় ছুঁয়ে থাকা গালুডি-ঘাটশিলা। বান্দোয়ান থেকে প্রায় ১৭ কিমি দূরে কুঁচিয়া বিটের এই দুয়ারসিনি। বাম আমলে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র চালু হয়। তখন এই কটেজ পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের অধীনে ছিল। তাদের পর্যটন পুস্তিকায় একেবারে শেষ ২০ নম্বরে নাম ছিল এই কেন্দ্রের। উদ্বোধনের পর বছর পাঁচেক এখানে পর্যটন ব্যবসা জমে উঠলেও পরবর্তীকালে মাওবাদী আতঙ্কে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রকে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলতে কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নতুন চেহারায় এই কেন্দ্র চালু করে বনদফতর।যদিও কোভিড থাবায় একাধিকবার থমকে যায় এখানকার পর্যটন ব্যবসা। ২০২১-র শেষ থেকে উইকেন্ড ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই হাউসফুল থাকে। অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের যে অন্যতম ঠিকানা এই দুয়ারসিনি।