সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সম্বন্ধ বা দেখাশোনা করে বিয়ের তুলনায় প্রেম, ভালবাসার বিয়ে অনেক সহজেই বিচ্ছেদের রাস্তায় হাঁটছে। পরিসংখ্যানে এটাই বেরিয়ে আসছে বলে একটি মামলার শুনানিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি গাভাইয়ের এহেন পর্যবেক্ষণ নিয়েই মুখ খুললেন বাংলার সেলিব্রিটিরা।
শ্রীলেখা মিত্র (অভিনেতা)
এটা একটা সময়ের ব্যাপার। আগে যখন লাভ ম্যারেজ হত, তখন কি সব বিয়ে ডিভোর্স হয়ে যেত? আসলে আজকে আমাদের ধৈর্য চলে গিয়েছে। আগেকার দিনের মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন ছিল না। তারা স্বামীর উপর নির্ভরশীল ছিল। তাদের পছন্দকে মান্যতা দেওয়া হতো না। বিয়েটা মনের মতো না হলেও তাকে মুখ বুজে থেকে যেতে হত। সিস্টেমটা থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারত না। এই সময় একটা মেয়ে তার স্বামীর কাছ থেকে একটু বন্ধুত্ব প্রত্যাশা করে। সেটা সব সময় অর্থনৈতিক নয়। কিন্তু মানসিক সাহায্য না পাওয়া গেলে মেয়েটি বাধ্য হয় সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। প্রেম করার সময় মনে হয়, বাকি জীবনে সব কিছু এমনই চলবে। কিন্তু সেই মানুষটার সঙ্গে যখন ২৪ ঘণ্টা থাকতে হয়, তখন দেখা যায় প্রত্যাশা মিলছে না।
দুর্নিবার সাহা (গায়ক)
আমার মনে হয়, প্রেম ও ডিভোর্স, দুটোই খুব স্বাভাবিক বিষয়। এই পরিসংখ্যানটা কেন উঠে এসেছে আমার জানা নেই। তবে, দুটো বিষয়ই এগজিস্ট করে এটা সত্যি। সংখ্যা বাড়ছে বা কমছে সেটার জন্য প্রেম বা ভালবাসাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার সঙ্গে পারিপার্শ্বিক সমস্ত কিছুই সমানভাবে যুক্ত। আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক বিকাশ। সব কিছুই খুব আপেক্ষিক এবং পারস্পরিক।
দেবশঙ্কর হালদার (অভিনেতা)
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণকে শ্রদ্ধা জানিয়েই বলব, প্রেমের মধ্যে বন্ধন যেমন আছে। তেমন তো স্বাধীনতাও আছে। একে অপরকে ভালবেসে স্বেচ্ছায় চারহাত এক হয়। আবার ‘আমার আর তোমার সঙ্গে থাকতে ভাল লাগছে না।’ এমন কথাও বলা যায়। এটাই তো স্বাধীনতা। একজনকে ভালবাসলেই সে কথা বলা যায়। মা-বাবা সম্বন্ধ করে বিয়ে দিলে অনেক সময় এমন কথা বলা যায় না। সম্বন্ধ করে বিয়ে কি ভাঙছে না? খবর নিলে দেখা যাবে তেমন বিয়েও ভাঙে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, প্রেমের মধ্যে মুক্তি আছে।
শিলাজিৎ মজুমদার (গায়ক)
সাত কিংবা আটের দশকে বিয়েটা আগে হত। তারপর চুটিয়ে প্রেম। এখন বিয়ের বহুদিন আগে প্রেমের ইনিংস শুরু হয়ে যাচ্ছে। অনেকটা সময় প্রেম করার কারণে সম্পর্কে নতুন কিছু থাকছে না। একে অপরের সম্বন্ধে কোনও কিছু অজানা থাকছে না। এছাড়াও এখন অপশন অনেক বেড়ে গিয়েছে। সে কারণেই হয়তো ডিভোর্স বেড়ে গিয়েছে। শুধু ছেলেরা নয়, গ্রামের দিকে দেখছি বহু মেয়ে বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে আসছে। কয়েক যুগ আগে এটা চিন্তা করাও সম্ভব ছিল না। সে সময় বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েটা ভাবত যতই অশান্তি হোক, ঝামেলা হোক, আমি বিয়েটা ছেড়ে বেরোতে পারব না। একটা বাধ্যবাধ্যকতা ছিল। স্বামী মারধর করলেও মেয়েটি থেকে যেত। এখন সেটা নেই। প্রেম করে বিয়ের পর যখন ঝামেলা হচ্ছে মেয়েটা চট করে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসছে। এমনকী, এও বলছে, বিয়েতে বাবা যা যা দিয়েছিল সব ফেরত দাও। এটাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং এই যে বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে এর মধ্যে স্বাধীনভাবে বাঁচার একটা বিষয় জড়িয়ে।