সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গোটা পৃথিবীতে ডায়বেটিসে ভুগছেন অসংখ্য মানুষ। ইঁদুরদৌড়ের দুনিয়ায় ডায়বেটিস মারণ রোগ হয়ে উঠছে ভারতেও। এমনকী আক্রান্ত শিশুরাও। এই অবস্থায় এরাজ্যের ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা প্রাথমিক স্তরে পৌঁছে দিতে এসএসকেএম হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফের আধিকারিকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগেই এই বিষয়ে কথা হয়েছিল।
গত জুলাই-আগস্টে ইউনিসেফের আধিকারিকরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা বাচ্চাদের ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগের প্রশংসাও করেন। শিশুদের মধ্যে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় আরও বেশি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ইউনিসেফের প্রধান ডাঃ মনজুর হোসেন পিজি হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য পরীক্ষাগার, ক্লিনিক এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করেন। এসএসকেএম হাসপাতালের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি সব ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্সের সঙ্গে বাচ্চাদের ডায়াবেটিস নিয়ে কাজ করতে রাজি হয়েছে ইউনিসেফ।
উল্লেখ্য, টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগে একটি শিশু আক্রান্ত হয় তখন, যখন তার শরীর অগ্ন্যাশয়ের মধ্যেকার ইনসুলিন প্রস্তুতকারক কোষগুলিকে ধ্বংস করে। ইনসুলিন রক্তে শর্করার মাত্রাকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। ইনসুলিন প্রস্তুত না হওয়ার ফলে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভোগা শিশুদের দিনে বেশ কয়েকবার ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়।
মাঝে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডাঃ হোসেন জানান, ইউনিসেফ, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর, পিজি হাসপাতালকে সহযোগিতা করছে বাচ্চাদের ডায়াবেটিস চিকিৎসার একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ভিত্তিক মডেল তৈরি করার জন্য। এইভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাভিত্তিক ব্যবস্থাগুলি শক্তিশালী করে শিশুদের মধ্যে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমানের জেলা হাসপাতাল এবং এসএসকেএম হাসপাতালে টাইপ-১ ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য অসংক্রামক রোগের ক্লিনিক রয়েছে। বছরে প্রায় ৬০০ শিশুকে এই ক্লিনিকগুলিতে চিকিৎসা করা হচ্ছে। আরও দশটি জেলা হাসপাতালে এই ধরণের ক্লিনিক শুরু করার জন্য সরকারি অনুমোদন মিলেছে। পরে সারা রাজ্য জুড়ে ক্লিনিক হবে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বন্দনা ভাটিয়া বলেন, "প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ইউনিসেফ সারা রাজ্যজুড়ে ডাক্তার, নার্স, আশাকর্মী ও কমিউনিটি হেলথ অফিসারদের বাচ্চাদের ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর ফলে আরও বেশি করে এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা শনাক্ত হবে এবং তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।" ডাঃ হোসেনের কথায়, ইউনিসেফের লক্ষ্য হল শিশুদের অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। যাতে সব শিশু চিকিৎসার আওতায় আসে।
পিজি হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজির বিভাগের অধ্যাপক এবং ইউনিসেফ-পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রকল্পের প্রধান ডাঃ সুজয় ঘোষের মতে, গ্রাম পর্যায়ে বাচ্চাদের ডায়াবেটিস চিকিৎসা পৌঁছানোর জন্য একেবারে প্রাথমিক স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষিত করা দরকার। তিনি বলেন, "তাহলে আরও বেশি শিশুদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে। এই অসুখের প্রাথমিক লক্ষণগুলি, যেমন শিশুর প্রচণ্ড জল তেষ্টা পাওয়া, ঘন ঘন মূত্রত্যাগের ইচ্ছা, রোগা হয়ে যাওয়া ও সবসময় ক্লান্তিতে ভোগা ইত্যাদি দেখে তাঁরা আরও বেশি শিশুদের নিকটবর্তী ক্লিনিকে পাঠাতে পারবেন। এভাবে তাদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।"
ভারতের ইয়ং ডায়াবেটিক রেজিস্ট্রির পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে প্রতি এক লাখ শিশুর মধ্যে পাঁচটি শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত ডিডিজি এবং ডিরেক্টর (ইএমআর) ডাঃ এল স্বস্তিচরণের বক্তব্য, পরিবর্তনশীল আচরণের ধরণ এবং শিশুদের মধ্যে জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়ায় সারা দেশে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের অসংক্রামক রোগবিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর চিকিৎসক নিতাই মণ্ডল বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যজুড়ে অসংক্রমিত রোগের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলি বাড়িয়ে তুলছে। ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্সের প্রেসিডেন্ট ডাঃ জি ভি বাসভারাজা ভারতে অসংক্রামক রোগে আক্রান্তদের উচ্চ সংখ্যার চিত্র তুলে ধরেন এবং ডাক্তারদের রোগীদের সমস্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রসারিত করার আহ্বান জানান।