সুব্রত বিশ্বাস: ট্রেন চলায় মহানগরের সঙ্গে রেলসূত্রে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু জেলা। তবে এখনও ব্রাত্য বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমানের একটি বড় অংশ। বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনে চলছে না লোকাল ট্রেন (Local Train)। কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখা তথৈবচ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থেকে যাত্রী সমিতি সবাই দাবি তুলে চিঠি দিয়েছেন রেলমন্ত্রীর কাছে। আট মাস হতে চলল ওই দুই শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ। ফলে চাষাবাদ থেকে ব্যবসা, এমনকি ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। লোকাল ট্রেন চালু হলেও ওই শাখাগুলিতে চলছে না ট্রেন। বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন চলার দাবিতে যাত্রী বিক্ষোভে অতিষ্ঠ স্টেশনের কর্মীরা। হাওড়ার ডিআরএম ইশাক খান বলেন, “রেল বোর্ডের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে।” নভেম্বরের মধ্যেই চালু হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ শাখায় লোকাল ট্রেন বন্ধে নলহাটি, মুরারই, সাঁইথিয়া, রাজগ্রাম-সহ বীরভূমের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন লোকাল না চলায় বর্ধমান, কলকাতায় যেতে পারছেন না। ছোট ব্যবসায়ী থেকে অসুস্থ মানুষজনের অবস্থা সঙ্গীণ। বাসে রামপুরহাট থেকে পসরা নিয়ে গ্রামে গিয়ে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পারছে না তাঁরা। রাজগ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক কুদ্দুস আলির আক্ষেপ, “দীর্ঘদিন ট্রেন না চলায় জেলা ও শহরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন জনজীবন। অফিসকর্মী থেকে কৃষক, শ্রমজীবী প্রত্যেকের অসুবিধা হচ্ছে। অবিলম্বে ট্রেন না চললে জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে।” ওই শাখায় দৈনিক ১৪টি ট্রেন চলে। ট্রেনগুলি বারহারওয়া ও মালদহের সঙ্গে যুক্ত। ফলে ঝাড়খণ্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গেও বিচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ।
[আরও পড়ুন: এখনও অধরা তপনে একই পরিবারের ৫ জনের রহস্যমৃত্যুর কারণ, তদন্তে CID]
কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখায় ট্রেন চলছে না। আজিমগঞ্জ-রামপুরহাট শাখায়ও ট্রেন বন্ধ। অধীর চোধুরী রেলমন্ত্রীকে অবিলম্বে এই ট্রেন চালানোর দাবি জানিয়েছেন। এই শাখায় ট্রেন না চলায় সাগরদিঘি, তাকিপুর, মোড়গ্রাম, বারহারওয়া, নলহাটি, রামপুরহাটের মানুষণ দীর্ঘদিন ধরে চরম অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। হাওড়া থেকে কবিগুরু ও গণদেবতা এক্সপ্রেস বন্ধ। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে ছোট ব্যবসায়ী, এমনকি চাকরিজীবী মানুষজন কলকাতা ও জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারছেন না। বহু বয়স্ক অসুস্থ মানুষ কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসেন। তাঁদের চিকিৎসাও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, রাজ্যে রেল চলাচল শুরুর পর তিনদিন কেটে গেলেও আরও ট্রেনের দাবিতে সরব যাত্রীরা। শুক্রবার অফিস টাইমে ১০০ শতাংশ ট্রেন চালিয়েছে হাওড়া ডিভিশন। যদিও লিংকের সমস্যায় এদিন শিয়ালদহ ডিভিশন সেই পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ডিআরএম এসপি সিং জানান, ‘পাথ’ না থাকায় ১০০ শতাংশ ব্যস্ত সময়ে চালানো সম্ভব নয়। তবে দু’এক দিনের মধ্যে ৯০ শতাংশ ট্রেন ব্যস্ত সময়ে চালাবে ওই ডিভিশন। শুক্রবার সকালে লিঙ্ক তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তবে বিকেলের দিকে ১০ থেকে ১৫টি ট্রেন বাড়িয়ে চালানো হয় বিভিন্ন শাখায়। তবে তিনদিন হলেও ভিড়ের সঙ্গে সেই উদাসীনতা থেকেই গেল। মাস্কবিহীন অবস্থায় অনেকেই ট্রেনে চড়েন। এমনকি টিকিট কাউন্টার থেকে অটো ভেন্ডিং মেশিনের লাইনেও মাস্ক ছাড়াই যাত্রীদের দেখা গেল। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ অনেকেই। বিভিন্ন স্টেশনে এ নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ দেখা গেলেও কোভিড বিধি দেখা রাজ্যের বিষয় বলে জানান রেল কর্তারা।