গোবিন্দ রায়: কলকাতা হাই কোর্টে সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী মাম্পি ওরফে পিয়ালি দাসের জামিন। ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। আপাতত জেলা পুলিশ সুপারের নজরদারিতে তদন্ত চলবে। আগামী ১৯ জুন মামলার পরবর্তী শুনানি। গ্রেপ্তারির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি।
সন্দেশখালির (Sandeshkhali) বিজেপি নেত্রীর আইনজীবী শুক্রবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে জানান, "গত ৭ মে অভিযোগ দায়ের হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে FIR রুজু হয়। তার দুদিন পর ৯ মে পিয়ালি দাসের বাড়ির বাইরে ৪১(এ) নোটিস লাগিয়ে আসে পুলিশ। সেখানে কোনও জামিন অযোগ্য ধারার কথা উল্লেখ ছিল না। অথচ সেদিনই তদন্তকারী আধিকারিক ১৯৫ (এ) ধারা যুক্ত করার আবেদন জানান। এবং সেদিনই এই ধারা যুক্ত করার অনুমতি দেয় নিম্ন আদালত। এই ধারা জামিন অযোগ্য। ১৪ মে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে যান পিয়ালি দাস। সেই সময় তাঁকে জামিন অযোগ্য ধারার কথা জানিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।"
মাম্পির আইনজীবীর সওয়ালের পর বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তোলেন। তাঁর মন্তব্য, "নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন কেউ যদি অভিযোগকারী বা সাক্ষীদের মিথ্যা বলার জন্য হুমকি দেয় শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই ১৯৫ (এ) প্রযোজ্য। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা স্পষ্ট বলা আছে। যদি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দেখেও কেউ চোখ বন্ধ করে বসে থাকে, তাহলে সেটা আদালত অবমাননার শামিল। ম্যাজিস্ট্রেট কী করেছেন? এমন গ্রেপ্তারির নেপথ্যে মাস্টারমাইন্ড কে? এই মামলাটি কোন অফিসার দেখছেন?"
[আরও পড়ুন: বারান্দায় দুই বোনকে কুপিয়ে খুন! সাতসকালে হাড়হিম হত্যাকাণ্ড পাথরপ্রতিমায়]
এর পরই জেলবন্দি মাম্পি (Mampi Das) ওরফে পিয়ালি দাসকে অবিলম্বে মুক্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। তার পরই শুক্রবার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান তিনি। সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআরে জামিন অযোগ্য ধারা প্রয়োগের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে আদালত। অবশ্য এফআইআরে থাকা বাকি সমস্ত ধারার তদন্ত চলবে। জেলা পুলিশ সুপারের নজরদারিতে তদন্ত চলবে। তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করবে না পুলিশ। আগামী ১৯ জুন মামলার পরবর্তী শুনানি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই সন্দেশখালি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সেখানকার বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তাঁর শাগরেদদের কীর্তিতে আঁতকে উঠেছিল গোটা বাংলা। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশ্যে অন্য তথ্য। প্রকাশ্যে এসেছে স্টিং অপারেশনের ভিডিও। যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে শিরোনামে উঠে এসেছে সন্দেশখালি। ওই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরই বিস্ফোরক দাবি করেছেন শেখ শাহজাহান ও তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা মহিলারা। তাঁদের দাবি, তাঁদের সঙ্গে এধরণের অত্যাচার হয়নি। শাহজাহানদের বিরুদ্ধে জব কার্ডের টাকা না দেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল। কিন্তু বিজেপি নেত্রী পিয়ালি দাস ওরফে মাম্পি তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই কাগজ ব্যবহার করেই ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়। এই অভিযোগ ওঠার পরই সন্দেশখালি থানার পুলিশ পিয়ালি দাসকে নোটিস পাঠায়। এর পর আদালতের দ্বারস্থ হলে গ্রেপ্তার করা হয় মাম্পিকে।