সুকুমার সরকার, ঢাকা: স্ত্রীকে খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি হয়েছিল। শাস্তি এড়াতে ছদ্মবেশ নিয়েছিল সে। সাংবাদিক সেজে ১৭ বছর কাটিয়েও ফেলেছিল। কিন্তু ওই যে কথায় আছে, ধর্মের কল আপনি নড়ে। অবশেষে ব়্যাবের জালে আটক হল অভিযুক্ত।
সাভারের আশুলিয়া থেকে আশরাফ হোসেন কামাল নামের ৪৭ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ের বাসিন্দা সে। স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে ১৭ বছর ধরে পালিয়ে বেড়ানোর পর বৃহস্পতিবার অবশেষে র্যাবের জালে ধরা পড়ে। কীভাবে সে দীর্ঘদিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তা উঠে এসেছে র্যাবের তদন্তে।
শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “স্ত্রীকে হত্যার দায়ে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত আশরাফকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু ২০০৫ সালের ওই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সে পালিয়ে ছিল। অবশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরে র্যাব তাকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।”
[আরও পড়ুন: দেশের দৈনিক করোনা সংক্রমণ ২২ হাজারের নিচে, একাধিক রাজ্যে আরও শিথিল কোভিডবিধি]
আশরাফের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালিতে। ১৯৯৮ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতেকোত্তর করে ২০০১ সালে সোনারগাঁওয়ে একটি সিমেন্ট কারখানায় কাজ শুরু করে। ২০০৩ সালে সানজিদা আক্তারের সঙ্গে বিয়ের পর ওই সিমেন্ট কোম্পানির আবাসিক এলাকাতেই থাকত তারা। তাদের একটি ছেলেও হয়। ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ওই আবাসিক এলাকা থেকে সানজিদার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তখন ছেলের বয়স মোটে ১৫ মাস। পুলিশ সন্দেহবশত আশরাফকে গ্রেপ্তার করলেও শিশু সন্তানের কথা ভেবে ১২ দিন পর সানজিদার বাবা সাদেক মিয়া আশরাফের জামিনের ব্যবস্থা করেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার একদিন পরই আশরাফ এলাকা ছাড়ে।
২০০৬ সালে আশুলিয়ায় পরিচয় গোপন করে আরেকটি বিয়ে করে। তাদের ১৩ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। এদিকে সানজিদার ময়নাতদন্তে দেখা যায়, শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে ওই তরুণীকে। সোনারগাঁ থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। পুলিশের তদন্তেও হত্যার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তদন্ত শেষে পুলিশ ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। আশরাফের অনুপস্থিতিতেই তার বিচার চলে। ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
র্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, “সোনারগাঁ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বেশিরভাগ সময় আশুলিয়ায় ছিল আশরাফ। সেখানে সে কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করছিল। যুক্ত ছিল আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সঙ্গেও।” জেরায় আশরাফ জানিয়েছে, ২০০৬ সালে সে আশুলিয়ায় ‘সাপ্তাহিক মহানগর বার্তা’পত্রিকার সহসম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করে। মূলত লুকিয়ে থাকার সুবিধার্থে এই পেশা বেছে নিয়েছিল। ২০০৯ সালে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য হয় আশরাফ। ২০১৩-১৪ সালে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদকও নির্বাচিত হয়। ২০২০ সালে সে দৈনিক সময়ের বাংলা নামের এক পত্রিকায় প্রতিবেদক হিসেবে যুক্ত হয়। সর্বশেষ সাপ্তাহিক ‘স্বদেশ বিচিত্রা’য় কাজ করছিল সে। আশুলিয়ায় কমপ্লায়েন্স সলিউশনস নামে একটি কনসালটেন্সি ফার্মও খুলেছে আশরাফ।