shono
Advertisement
Delhi stampede

ভিড় এড়াতে গিয়ে মাথায় গেঁথে যায় পেরেক, দিল্লিতে ৭ বছরের কন্যাকে হারিয়ে হাহাকার বাবার

সব হারিয়ে অসহায় বাবার চোখে এখন অপার শূন্যতা।
Published By: Amit Kumar DasPosted: 09:14 AM Feb 17, 2025Updated: 10:54 AM Feb 17, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চোখের সামনে ৭ বছরের মেয়েকে ছটফট করতে করতে মরতে দেখেছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, কিছুক্ষণ আগে আনতে পারলে হয়ত কিছু করা যেন। মারণ ভিড়ের মধ্যে থেকে সেই 'কিছুটা সময়' না পাওয়ায় 'আত্মদগ্ধ' হচ্ছেন অসহায় পিতা। নয়াদিল্লি স্টেশনে ভয়াবহ সেই দৃশ্য ভাবলে এখনও শিউরে উঠছেন সন্তানহারা বাবা ওপিল সিং। চিকিৎসকদের কাছে তাঁর করুন আর্তি, 'আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন।'

Advertisement

নয়াদিল্লি স্টেশনের ভয় ধরানো একের পর এক ছবি ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে দেশ। যেখানে দেখা যাচ্ছে, শয়ে শয়ে জুতো, ব্যাগ, পোশাক ছড়িয়ে রয়েছে স্টেশন চত্বরে। যা প্রমাণ দিচ্ছে শনিবার রাতের ভয়াবহতার। কোথায় পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে পথে বসে কাঁদছেন পরিজন। ভিড়ের মধ্যে স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ না পেয়ে ছবি হাতে কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রশাসনের দরজায়। হৃদয় মুচড়ে দেওয়ার মতো একের পর এক মর্মান্তিক ছবি দেখা যাচ্ছে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে। এই তালিকাতেই ছিলেন ওপিল সিং। রবিবার দিল্লি পুলিশের তরফে মৃত ১৮ জনের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে রয়েছে তাঁর ৭ বছরের কন্যা সন্তান। পরিবার-সহ মহাকুম্ভে যাচ্ছিলেন দিল্লির বাসিন্দা ওপিল। তবে তার আগেই সব হারিয়ে এখন তাঁর চোখে অপার শূন্যতা।

রবিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সন্তানহারা বাবা বলেন, শনিবার রাতে ১৪ নম্বর স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় দেখে, বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ফেরার সময়েই ঘটে যায় বিপদ। প্রবল ভিড়ের ধাক্কায় তাঁর ৭ বছরের মেয়ে ছিটকে পড়ে রেলিংয়ে। ওই ব্যক্তির কথায়, "মেয়ে যখন ওখানে ফেঁসে গিয়েছিল সেই সময়ই ওখান থেকে প্রায় ৫-৬ হাজার মানুষ নামতে শুরু করে। সেই সময়ই মাথায় পেরেক গেঁথে গিয়েছিল ওঁর।" একথা বলার সময় গলা ধরে আসে ওপিলের। সেইভাবেই বলেন, "ভিড়ের মধ্যে কেউ পকেট কেটে নিয়েছিল। ওই অবস্থায় কোনও সাহায্য পাইনি। ওখানে যিনি কুলি ছিলেন, তিনি আমায় ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন। সেইভাবে কলাবতী হাসপতালে নিয়ে যাই। তবে ডাক্তার বললেন, মেয়ে আর বেঁচে নেই কিছুক্ষণ আগে আনলে কিছু করা যেত।" এরপর অসহায় বাবার আকুতি, "আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন।"

উল্লেখ্য, শনিবার মহাকুম্ভে যাওয়ার উদ্দেশে শয়ে শয়ে মানুষ জড়ো হয়েছিলেন নয়াদিল্লি স্টেশনে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, স্বতন্ত্রতা সেনানী এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর-রাজধানী এক্সপ্রেস এই দুটি ট্রেনে প্রয়াগরাজ যাবেন বলে বহু মানুষ ১২ এবং ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু দুটি ট্রেনের কোনওটিই সময়মতো পৌছয়নি। এরমাঝে অভিযোগ, স্টেশনে ভুল ঘোষণা করা হয় রেলের তরফে। এর মধ্যে কুম্ভের জন্য স্পেশাল ট্রেন প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ঢুকে পড়ে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস আসতে দেখে ওই ট্রেনের যাত্রীরা তো বটেই বাকি দুটি ট্রেনের যাত্রীরাও হু হু করে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে ছুটতে থাকেন। সকলে একসঙ্গে ওই ট্রেন ধরার জন্য এগোলে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১৮ জনের। এই দুর্ঘটনায় রেলের তরফে ইতিমধ্যে মৃতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যাঁদের আঘাত গুরুতর, তাঁরা আড়াই লক্ষ এবং যাঁদের আঘাত ছোটখাটো, তাঁরা এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন। শনিবারের ঘটনার তদন্তের জন্য দুই সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • চোখের সামনে ৭ বছরের মেয়কে ছটফট করতে করতে মরতে দেখেছেন।
  • হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, কিছুক্ষণ আগে আনতে পারলে হয়ত কিছু করা যেন।
  • মারণ ভিড়ের মধ্যে থেকে সেই 'কিছুটা সময়' না পাওয়ায় 'আত্মদগ্ধ' হচ্ছেন অসহায় পিতা।
Advertisement