সম্যক খান, মেদিনীপুর: জঙ্গলের মধ্যে বারবার জ্বলছে আগুন। চাঁদড়া থেকে শুরু করে শালবনী, গোয়ালতোড়, কেশপুর, আনন্দপুর সর্বত্রই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ করে জঙ্গলের গভীরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করছে। যার জেরে হাঁসফাঁস অবস্থা দমকল বিভাগের। মুহুর্মুহু ডাক পড়ছে দমকলকর্মীদের। বনদপ্তরের পক্ষ থেকে একের পর এক সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। চলছে সচেতনতামূলক প্রচারও। কিন্তু কোনও প্রচারেই কোনও কাজ দিচ্ছে না। ফলে ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা সেটাই এখন প্রশ্ন।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেউ সজ্ঞানে কেউ আবার না বুঝেই জঙ্গলের ঝরা পাতায় আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন। এতে জঙ্গলের মধ্যে হাতি থেকে শুরু করে বন্য জীবজন্তুরা যেমন সংকটের মধ্যে পড়ছেন তেমনি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান বনজ সম্পদও। বনদপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, নানা কাজে মানুষ যান জঙ্গলের মধ্যে। কেউ পাতা কুড়োতে তো কেউ কাঠকুটো জোগাড় করতে। কেউ বা আবার যান গরুছাগল চরাতে। তাদের মধ্যেও অনেকে অসাবধানতাবশতঃ বিড়ি খেয়ে তা আধপোড়া অবস্থাতেই ফেলে দেন। সেখান থেকেও আগুন লাগতে পারে। আবার অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে আগুন ধরিয়ে দিয়ে থাকে। সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে কাঠের চোরাকারবারীরাও। সেইসব দুষ্ট চক্রেরই সন্ধান করছে বনদপ্তর। সম্প্রতি যেভাবে একের পর এক চাঁদড়া, গোয়ালতোড়, গড়বেতা, শালবনী, কেশপুরে জঙ্গলের ভেতর আগুন ধরানো হয়েছে তাতে দুষ্টচক্রেরই মদত আছে বলে মনে করছে বনদপ্তর।
[আরও পড়ুন: নওশাদের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে ফের পথে বাম-ISF, ১৪৪ ধারা জারি সত্ত্বেও ভাঙড়ে সভা আরাবুলের!]
অনেক সময় জঙ্গলের আদিম অধিবাসীরা বন্য ইঁদুর থেকে শুরু করে নানান জন্তু শিকার করেন। ফলে তারাও জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেন যাতে ওইসব বন্যপ্রানীরা প্রকাশ্যে আসতে পারে। শালবনীর বাসিন্দা শঙ্কর মাহাতো বলেছেন, জঙ্গলের মধ্যে এধরনের কার্যকলাপের ফলে বন্য জীবজন্তুরা লোকালয়ে চলে আসছে। যাতে সমস্যায় পড়ছেন সাধারন মানুষ। অবিলম্বে বিষয়টি দেখা দরকার। জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ নেপাল সিংহ বলেছেন, জঙ্গলে আগুন লাগানোর ক্ষেত্রে দুষ্টচক্রের হাত তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এবিষয়ে সাধারন মানুষের পাশাপাশি বনরক্ষা কমিটির সদস্যদেরও সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ধরা পড়লে কড়া আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এরই পাশাপাশি এবার সোর্স বাড়ানোরও চিন্তাভাবনা করছে বনদফতর। এর আগেও এধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিল। গরু চরানো, পাতা কুড়ানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ জঙ্গলের ভেতর যান। তাদের মধ্য থেকেই খবরাখবর বেশীমাত্রায় যোগাড় করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।