স্টাফ রিপোর্টার: কেউ বন্ধ ঘর ছেড়ে বেরোতে চায়। কারও একটু বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার আবদার। কারও আবদার শুনে চমক লেগেছিল। আবার কারও ছেলেমানুষি শুনে হেসেই খুন। কারও কথা আবার বেশ ভাবিয়েছে। এমনটা যে হবে, তার জন্য অনেকেই প্রস্তুত ছিলেন না। সরকারি হোমের নানা বয়সের বাচ্চার নানা আবেদন। নানা ভাবনার ফল সে সব। সব শেষে ঠিক হল প্রতি মাসে এমন সাক্ষাৎকার হবে। এক পারে মন্ত্রী থাকবেন। অন্য পারে সরকারি হোমের বাচ্চারা। আপাতত ভারচুয়ালি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেই মতো ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট একটি দিন ঠিক করে হবে ‘মিট দ্য মিনিস্টার’ (Meet the minister)। বাচ্চারা তাদের মনের কথা খুলে বলবে।
রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তর (Department of Women and Child Welfare) তাদের অধীনে থাকা বিভিন্ন জেলার সমস্ত হোমের বাচ্চার কথা ভেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে। একদিন আগেই চলে গিয়েছে শিশু সুরক্ষা দিবস। সেই উপলক্ষেই শিশু সুরক্ষা কমিশনের তরফ থেকে একটি কর্মসূচির আয়োজন হয়। যেখানে মন্ত্রী শশী পাঁজা (Shashi Panja) উপস্থিত ছিলেন। অবশ্যই ভারচুয়ালি। বিভিন্ন জেলার হোমের বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই তিনি বাচ্চাদের মনে থাকা নানা ধরনের এই সব প্রশ্ন জানতে পারেন। তার পরই সিদ্ধান্ত নেন প্রতি মাসে এমন কর্মসূচি আয়োজনের।
[আরও পড়ুন: নিউটাউন কাণ্ডে বাড়ছে আতঙ্ক! ‘অচেনা’ ভাড়াটে নিয়ে কড়া হওয়ার ভাবনা বিভিন্ন আবাসনের]
কেমন ছিল সেসব আবদার? কারও অতি সামান্য দাবি, পিৎজা বানানো শিখতে চায়। কেউ একটু হোমের বাইরে বেরোতে চায়। একটু এদিক-ওদিক ঘুরে দেখলে কেমন হয়, সে জানতে চেয়েছে মন্ত্রীর কাছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই কড়া বিধিনিষেধ শিথিল হলে একটু শিক্ষামূলক ভ্রমণের আয়োজন করতে হবে।
হোমটি যে জেলায়, প্রাথমিকভাবে সেখানেই হবে আয়োজন। কেউ আবার একটু ছুটি চেয়েছে। বাড়ির লোককে দেখতে চায়। সাধ্যমতো সুযোগ হলেই তার ব্যবস্থা হবে। একজনের আবার খুব আগ্রহ মন্ত্রীর ছোটবেলা সম্পর্কে জানার। বলতে বলতে হেসেই ফেললেন শশী। তাঁর কথায়, “কতজনের কতরকম প্রশ্ন। যতটা পেরেছি জবাব দিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: হাসপাতাল থেকেই করোনা সংক্রমণে মৃত্যু বাবার, চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে সরব মেয়ে]
একজনের প্রশ্ন বেশ সিরিয়াস। নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চেয়েছে সে। প্রশ্ন করেছে তার ১৮ বছর বয়স হলে কোনও সরকারি কাজ কি সে পেতে পারে? সে ভাবে কোনও চাকরি না থাকলেও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তার একটা সুযোগ সে পেতে পারে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
একজনের প্রশ্ন একটু কঠিন। সে চায় রিয়ালিটি শোয় যেতে। সেরা হয়ে ফিরতে। হোমে এমন অনেকেই থাকে, যাদের পাচার হওয়া থেকে উদ্ধার করে আনা হয়। তাদের কি রিয়ালিটি শোয়ে নিয়ে যাওয়া যায়? সাধারণভাবে যায় না। কারণ তাতে তার বা তার পরিবারের আবার কোনও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তবে সেক্ষেত্রে ছদ্মবেশ ব্যবহার করে তাদের সেই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন এক আধিকারিক।
এমন নানা আবেদনের কথা বলতে গিয়ে অনেক আগে এভাবেই একবার একটি শিশু তাঁকে দেখে মন্ত্রী হওয়ার শখ জাহির করেছিল। মন্ত্রী নিজে একজন ডাক্তার। সেই সুবাদেই তাঁর বক্তব্য, “এরা এখন একেবারে বন্দি। সেই কারণেই একটি ভারচুয়াল অনুষ্ঠান করে কে কেমন আছে, কারও কোনও সমস্যা, চাহিদা আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেখান থেকেই একটি দিক বেরিয়ে এসেছে। এভাবে এদের একটু সঙ্গ দিতে পারলে মানসিক দিক থেকে এদেরও একটু ভাল লাগবে।”